নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: প্রয়াত কুসে মুনুস্বামী বীরাপ্পানের ছায়া দেখা যাচ্ছে আউশগ্রামের জঙ্গলে। দক্ষিণ ভারতের কুখ্যাত চন্দন দস্যু বীরাপ্পান— যে রাতারাতি জঙ্গল থেকে চন্দনগাছ কেটে সাফ করে দিত। প্রশাসন টেরই পেত না। কার্যত সমান্তরাল শাসন চালাত কেরল, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর জঙ্গলে। বীরাপ্পান মারা গিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু আউশগ্রামের জঙ্গলে তার ছায়া যেন দেখা যাচ্ছে। তা না হলে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রাতারাতি দেড় হাজার গাছ উধাও হয় কীভাবে? এতদিন প্রশাসন টের পায়নি। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ার পর বনদপ্তর তদন্তে নেমেছে। কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত তা তদন্ত করে দেখছে তারা। আউশগ্রামের রেঞ্জার লক্ষ্মণ কারক বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। গাছ কাটার জন্য কেউ বনদপ্তরের অনুমতি নেয়নি।
স্থানীয়রা বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে জঙ্গল সাফাই অভিযান চলে। যাদবগঞ্জ, কুমারগঞ্জ, দিগনগর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কেটে নেওয়া হয়। অনেক ছোট গাছও কাটা হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রভাবশালীরা গাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথম দিকে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায়নি। পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা সরব হয়েছেন। এভাবে গাছ কাটা শুরু হলে আউশগ্রামের জঙ্গল সাফ হয়ে যাবে। একসঙ্গে এত গাছ কাটা হলেও বনদপ্তর কেন ব্যবস্থা নিল না তা বোঝা যাচ্ছে না। ২০১৫ সালে গাছগুলি রোপণ করা হয়। অনেক মূল্যবান গাছ তারমধ্যে ছিল। সেগুলি বড় হয়ে ওঠার আগেই কুঠারের কোপ পড়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বন ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গাছ কাটতে হলে জেলা পরিষদকেও জানানো উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের তা জানানো হয়নি। কে বা কারা গাছ কেটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলায় অল্প কিছু জায়গায় জঙ্গল রয়েছে। সেখান থেকেও গাছ কাটা হলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে।
দিগনগর-২ পঞ্চায়েতের প্রধান ছবিতা মাহাত অবশ্য এর মধ্যে অনিয়ম কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলি গাছ লাগিয়েছিল। ওরা গাছ কাটার জন্য অনুমতি দিয়েছে। সমস্ত নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার জন্য টেন্ডার করার দরকার কীসের? এক আধিকারিক বলেন, এতগুলি গাছ কাটার অনুমতি পঞ্চায়েত দিতে পারে না। বনদপ্তরেরও অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া গাছ কাটার জন্য টেন্ডারও করতে হয়। নিয়ম না মেনে গাছ কাটা হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বিধান রয়েছে। বনদপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেও আউশগ্রামের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নেওয়া হতো। বনদপ্তরের তৎপরতায় সেটা বন্ধ হয়। কিন্তু এখন আবার যেন সেই পুরানো ছবি ফিরে এসেছে। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে জঙ্গলের আরও মূল্যবান গাছ উধাও হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।