নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: ৩০-৪০ শতাংশ ছাড়ে সরকারি কাজ করছেন অনেক ঠিকাদারই। এত বেশি ছাড় বা ‘লেস’ দিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের পর কাজের গুণগত মান কেমন থাকবে, তা নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরাই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। সাধারণত ঠিকাদাররা ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কাজ নিতে অভ্যস্ত। ফলে বিষয়টিতে নজরদারির জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক মহলে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। বেশি ছাড় দেওয়া কাজের গুণগত মান সবার আগে খতিয়ে দেখা হবে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। প্রয়োজনে রাজ্যস্তর থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্যেও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা সুপারিশ করতে পারেন। কোনওভাবেই কাজের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা হবে না বলে আধিকারিকরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন বলেন, কিছু জায়গায় সরকারি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারদের একাংশ মাত্রাতিরিক্ত ছাড় দিয়ে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন। কিন্তু, বেশি ছাড় দিয়ে কাজ করার পর গুণগত মান বজায় রাখা হচ্ছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ওইসব কাজ সবার আগে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে রাজ্য থেকেও প্রতিনিধিদল এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
কিন্তু, ঠিকাদাররা হঠাৎ করে কেন এত বেশি ছাড় দিয়ে জেলায় কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ব্লক ও পঞ্চায়েতস্তরে ঠিকাদাররা নিজেদের মধ্যে ‘সমঝোতা’ করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন। প্রশাসনের তরফে দরপত্র আহ্বান করার সময় ঠিকাদাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট কাজ বা প্রকল্পের টেন্ডারের দর স্থির করা হয়। কোন ঠিকাদার কাজটি করবেন, তাও নিজেদের মধ্যে তাঁরা ঠিক করে নেন। তিনি সবচেয়ে কম দরপত্র জমা দেন। বাকিরা কিছুটা বেশি টাকায় কাজটি করতে চান বলে দরপত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। ফলে প্রথম ঠিকাদারই কাজটি পেয়ে থাকেন। পরের কাজ আবার অন্যজন পান। তখন বাকিরা আবার বেশি দর দিয়ে থাকেন। এভাবেই ঠিকাদারদের মধ্যে আপসে সরকারি কাজের ভাগ বাটোয়ারা হয়ে থাকে। ফলে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বাইরের ঠিকাদাররা কার্যত ঢুকতে পারেন না। এখন বড় ঠিকাদাররা বিভিন্ন এলাকায় কম দরে কাজ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন বলেই আমাদের অনুমান। বাকিদের প্রতিযোগিতা থেকে হটিয়ে দিতে প্রয়োজনে প্রথম প্রথম খুব অল্প লাভ রেখেও তাঁরা কাজ করতে প্রস্তুত। পরে তাঁরাও ওইসব এলাকায় ‘একনায়কতন্ত্র’ কায়েম করবেন।
সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকাতেই মূলত জেলা, ব্লক ও পঞ্চায়েতস্তরে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ হচ্ছে। তারজন্য প্রায়ই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে একাধিক কাজের টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। ঠিকাদারদের সঙ্গে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। সিংহভাগ ঠিকাদার কোনও না কোনও জনপ্রতিনিধিকে ‘ভেট’ দিয়ে কাজ হাসিল করেন। ফলে কাজ পাওয়া নিয়ে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার যে প্রতিযোগিতায় ঠিকাদাররা নেমেছেন, তার পিছনে জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মদত রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। এমনকী এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও রেষারেষির চোরাস্রোত জেলাজুড়ে চলছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।