নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খাস কলকাতা। তার উপর সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের মতো অভিজাত এলাকা। বর্ধিষ্ণু পরিবারের একাকী বৃদ্ধাকে টার্গেট করে লুটপাটের ঘটনা ঘটল এখানেই। ভোজালি উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে বাড়িতে ঢুকল দুষ্কৃতীরা। তারপর বৃদ্ধাকে মারধর করে লুট হয়ে গেল ৩০ লক্ষ টাকার উপর মূল্যের সোনার গয়না ও নগদ টাকা। যাওয়ার সময় বৃদ্ধাকে তারা শাসিয়ে গেল, পুলিসকে জানালে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের শতাব্দীপ্রাচীন এই বাড়িতে স্বামীর মৃত্যুর পর একাই থাকেন বৃদ্ধা মধুমিতা মিত্র (৬৮)। তিন মেয়েই কর্মসূত্রে বিদেশে। বাড়িতে তিনজন কেয়ারটেকার ও একজন পরিচারিকা রয়েছেন। একা থাকেন বলে বাড়ির সামনের লোহার দরজায় সব সময় তালা দেওয়াই থাকে। কোমর ভেঙে যাওয়ায় মধুমিতাদেবী একমাস ধরে তিনতলায় শয্যাশায়ী। তাঁকে দেখভালের জন্য সর্বক্ষণের মহিলা অ্যাটেনডেন্ট রয়েছেন। পুলিস সূত্রে খবর, বুধবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়িতে হাজির হয় দু’জন। কলিং বেল টিপলে গেটের সামনে আসেন কেয়ারটেকার সমীর। তাঁকে গেট খুলতে বলে দুষ্কৃতীরা। কেয়ারটেকারের দাবি, রাজি না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে একজন গেটের ওপার থেকেই ভোজালি চেপে ধরে তাঁর গলায়। বাধ্য করা হয় গেট খুলতে। সমীরকে বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় তারা। ওই সময় সেকেন্ড ফ্লোরে এক কেয়ারটেকার জল ভরছিলেন। আর পরিচারিকা বসেছিলেন সামনে। দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকেই হাঁক দেয়, ‘মাসিমা, দরজাটা একটু খুলবেন। জল খাব।’ পরিচারিকা গীতা দাস রিমোট দিয়ে দরজা খুলে দিলে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে তারা। বৃদ্ধার অভিযোগ, তাঁর ঘর ভিতর থেকে লক ছিল। দুষ্কৃতীরা লাঠি মেরে দরজার লক ভেঙে ভিতরে আসে। তাঁকে মারধর করার পর গলার সোনার চেন, হাতের বাউটি ছিনিয়ে নেয়। ভোজালি দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাঁর থেকে আলমারির চাবি আদায় করে। ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার অলঙ্কার ও নগদ ১৫ হাজার টাকা লুট করে চটপট ভরে ফেলে দু’টি ব্যাগে। পালানোর সময় হুমকি দেয়, দলের আরও ছেলেরা বাইরে রয়েছে। পুলিসে খবর দিলে বডি টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলব। ভয়ে দীর্ঘক্ষণ পর থানায় অভিযোগ করেন মধুমিতাদেবী।
তদন্তে নেমে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তিন কেয়ারটেকার ও পরিচারিকার ভূমিকা। লোহার গেটের উচ্চতা ছ’ফুট হবে। তা টপকে অনায়াসে ঢুকতে পারত অভিযুক্তরা। তেমনটা না করে দুষ্কৃতীরা দু’টি গেটের মাঝে থাকা ফাঁক দিয়ে ভোজালি কীভাবে গলায় ধরল কেয়ারটেকারের? আর খুলে দেওয়ার পর সে লোক না ডেকে চুপচাপ বসে রইল কেন? পরিচারিকাই বা অপরিচিত ব্যক্তিদের এক কথায় কীভাবে দরজা খুলে দিল? তার দাবি, দুই দুষ্কৃতী ঢোকার পর সে নাকি পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এতবড় ঘটনা ঘটছে ভিতরে, তারপরেও সে ঘুমাতে চলে গেল? আর বৃদ্ধার কাছে থাকা অ্যাটেনডেন্ট কেন বাধা দিল না দুষ্কৃতীদের? অফিসারদের অনুমান, বৃদ্ধার কাছে টাকা আছে—এই খবর ভিতরের কেউই দিয়েছে দুষ্কৃতীদের। নিশ্চিতভাবে আগে তারা রেকি করে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বড়তলা থানায় কেয়ারটেকার ও পরিচারকদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করা মোবাইলের সূত্র ধরে খোঁজ চলছে অভিযুক্তদের।