• প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়
    আজকাল | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ছিল তাঁর স্বপ্ন দেখার ভাষা। দ্রোহের ভাষা, ভালবাসার ভাষা। সেই ভাষাতেই আজীবন খালি গলায় গান গেয়ে গিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। শক্ত শব্দের থেকেও বেশি ভরসা করছেন মানুষের রোজকার সহজ সরল শব্দে। কঠিন শব্দের সঙ্গে অবলীলায় ব্যবহার করেছেন মুটে-মজুর, চাষা- জেলের ভাষা। তাঁর ‘আমি বাংলায় গান গাই’- তে সুর মিলিয়েছে কোটি কোটি বাঙালি।

    অবিভক্ত বাংলার বরিশালে ১৯৪২ সালে জন্ম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন শিক্ষক। মা বাণীদেবী গৃহিণী। স্কুল জীবন থেকেই গানের রাখালিয়া সুরের প্রতি টান ছিল। সেই টান থেকেই ১২ বছর বয়সে মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের "আমি ধান কাটার গান গাই"-তে সুরারোপ। তার পর কালক্রমে ২০০ টিরও বেশি গান রচনা করেছেন, গেয়েছেন, সুর দিয়েছেন। সবই বাংলায়। গণসঙ্গীত নিয়ে থেকেছেন,  কিন্তু কোনও বিশেষ ধরনে আবদ্ধ হয়ে থাকেননি। মাঝি মাল্লাদের থেকে যেমন ভাটিয়ালি শিখেছেন, তেমনই অনুপ্রেরণা নিয়েছেন বাংলা আধুনিক গান থেকেও। এমনকি জাপানি গান থেকেও শুষে নিয়েছেন গানের মূল্যবোধ।

    সচরাচর কোনও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন না প্রতুল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সেতারের সুর পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন স্পষ্ট ভাষায় কথা বলাও। আক্ষরিক অর্থেই। গান শুনতে শুনতে একটি অনুষ্ঠানে এক অনুরাগী তাঁকে জানান, পঙক্তির শেষের দিকের শব্দগুলি ঠিক মতো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পর থেকে উচ্চারণ নিয়ে মারাত্নক সতর্ক থাকতেন। বিকৃত উচ্চারণ পছন্দ করতেন না। তাঁর উচ্চারণের মতোই স্পষ্ট ছিল রাজনৈতিক বক্তব্যও। মানুষের মুক্তির গান বারবার উঠে এসেছে তাঁর গলায়। লিখেছিলেন, "ঘর দোর বেচো ইচ্ছা হলে, বেচো সোনা দানা, বেচো না বেচো না বন্ধু হাতের কলমখানি।"

    নিজের কলমকেই আয়ুধ করেছেন। বড় আক্ষেপ ছিল, বাঙালিরাই বাংলা গান শোনেন না। অধ্যাপনা থেকে অবসরকাল, চেষ্টা করে গিয়েছেন ভাষার প্রতি তাঁর আজন্মলালিত ভালবাসা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার। শেষ বয়স পর্যন্ত দৃপ্ত গলায় গেয়ে গিয়েছেন বাংলা গান, বাংলার গান।  বাংলা যে তাঁর ‘দৃপ্ত স্লোগান, ক্ষিপ্ত তীর ধনুক’। সেই বাংলাতেই ‘তৃপ্ত শেষ চুমুক’ দিয়ে শনিবার বিদায় নিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
  • Link to this news (আজকাল)