উত্তরপ্রদেশ সরকারের গাফিলতিতেই মহাকুম্ভে চলছে মৃত্যুমিছিল, এমনই স্পষ্ট অভিযোগ ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-র। সংগঠনের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ এবং কেন্দ্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই অব্যবস্থার মহাকুম্ভে মানুষের মৃত্যুকে স্বীকার পর্যন্ত করেনি যোগী সরকার। মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনার দায় নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগের দাবিতে সরব হলেন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সদস্যরা। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠক করে প্রত্যক্ষদর্শীরা অব্যবস্থার মহাকুম্ভে নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু সাংবাদিক বৈঠক থেকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানোর কঠিন ফল কুম্ভের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এটি আদৌ দুর্ঘটনা কি না, তা নিয়েও দ্বিধা রয়েছে, কারণ এখনও পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি। মৃতদের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি, নিখোঁজদের খোঁজ পর্যন্ত শুরু হয়নি!
কেবল একটি রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কুম্ভ মেলা নাকি কেবল ধর্মীয় মেলা নয় বরং বাণিজ্যিকও! তাহলে কত ব্যবসায়ী এই মেলায় আসেন এবং কত কোটি টাকার ব্যবসা হয় তার সরকারি হিসাব পেশ করা হয় না কেন?’ এদিন যাদবপুরের বাসিন্দা অভিষেক রায় বর্ণনা করেন কীভাবে অব্যবস্থার মধ্যে ছ’ঘণ্টার বেশি সময় দিশাহীনভাবে ঘুরেছেন কেবল পুণ্য অর্জনের আশায়। ভিড় এবং চরম জলকষ্টের কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে তার থেকেও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সুরজিৎ পোদ্দার। পরিবারের তিন মহিলাকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে চোখের সামনে মাকে পদপিষ্ট হতে দেখেছেন তিনি। দেড় ঘণ্টা কোনও প্রশাসনিক সাহায্য পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। শেষে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে বিনা ময়নাতদন্তে কোনও কাগজ ছাড়া মায়ের মৃতদেহ রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিন প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, ‘কুম্ভ মেলার মৃত্যুমিছিল আদতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং অমানবিকতা। এই ঘটনার দায় স্বীকার করে যোগী আদিত্যনাথকে পদত্যাগ করতে হবে। যোগী সরকারের মিথ্যে প্রচারের বেলুন ফেটে গিয়েছে। ভিআইপিদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা রেখে সাধারণ পুণ্যার্থীদের কার্যত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পদপিষ্টের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা অগণিত। এমনকি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অগণিত মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। মৃত্যুর শংসাপত্র না দেওয়ার অর্থ মৃত্যুকে সুকৌশলে চাপা দেওয়া। সেই সঙ্গে পুলিশের অসহযোগিতা, লাঠিচার্জ, যানজটের সমস্যা তো রয়েছে।’ এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং রন্তিদেব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিনেতা রাহুল চক্রবর্তী, সমাজকর্মী দেবাশিস বক্সি, অনন্যা চক্রবর্তী প্রমুখ।