বিশ্বরূপ বিশ্বাস, চোপড়া
তাঁর পেশা, রাজনৈতিক নেতাদের টুপি পরানো!
শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম নাজির আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়।
তিন মাইল এলাকার বাসিন্দা ৩১ বছরের নাজির জন্ম থেকেই বিশেষ ভাবে সক্ষম। দু’হাতের ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করেন তিনি। নিজের এলাকার বিধায়ক সহ অন্যান্য নেতারা তাঁর জন্য কিছুই করছে না, এই দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করতেন তিনি। অসহায় ভেবে তাঁকে সাহায্যও করতেন সকলে। এমন একজন ব্যক্তির প্রতারণার ঘটনা সামনে আসায় অবাক হয়েছেন এলাকার অনেকেই।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নব জোয়ার কর্মসূচিতে চোপড়া গিয়েছিলেন। সে সময়ে নাজির তাঁর কাছে একই অভিযোগ করেন। অভিষেকের নির্দেশে দলের নেতারা দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও তিনি সাহায্য চাইলে আর্থিক সহায়তা করা হয়। এমনকী, তৃণমূলের একুশে জুলাই-এর কর্মসূচিতেও সাহায্যর আর্জি নিয়ে কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন নাজির। সেখানে সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, এলাকার নেতারা তাঁকে কোনও সাহায্য করেন না। ফিরে যাওয়ার পরে দলের নির্দেশে জোড়াফুলের স্থানীয় নেতারা ফের আর্থিক সহায়তা করেন বিশেষ ভাবে সক্ষম ওই ব্যক্তিকে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঝটকায় সকলের ভুল ভেঙে যায়। এ দিন সকালে বিধাননগরের বাসিন্দা সমাজসেবী তথা কলকাতা পুলিশের কর্মী বাপন দাসের বাড়িতে যান নাজির। সেখানে চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান–সহ অন্য নেতারা তাঁর জন্য কিছুই করেননি বলে অভিযোগ জানান।
পাশাপাশি বাপনের কাছে একটি টোটো দেওয়ার আবেদনও করেন তিনি। পুরো বিষয়টি ভিডিয়ো করে বাপন সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলকে সাহায্য করার আবেদন জানিয়ে পোস্ট করেন। সেই ছবি দেখে ইসলামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি জাকির হুসেনের মেয়ে বাপনকে ফোন করে জানান, দু’বছর আগে তাঁর বাবা জাকির হুসেন নাজিরকে একটি টোটো কিনে উপহার দিয়েছিলেন। বাপনের সেই পোস্টে প্রচুর সাধারণ মানুষ কমেন্ট করেন, প্রচুর জমির মালিক হয়েও নাজির লোকের কাছে সাহায্য চাইতে যান।
অনেকেই সেখানে লেখেন, নাজির বড় পাকা বাড়িতে থাকেন। তাঁর দুটি পিকআপ ভ্যান, ধান ও গম ঝাড়াই করার মেশিন আর প্রচুর জমি রয়েছে। ইসলামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি জাকির হুসেন বলেন,‘দু’বছর আগে আমি নিজের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলাম। সে সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিশেষভাবে সক্ষম একজন ছেলে আমায় দাঁড়ানোর জন্য ইশারা করেন। জানতে পারি, ওর নাম নাজির। হাতে কিছু টাকাও দিতে চেয়েছিলাম। সেটা না নিয়ে আমায় বলে, একটা টোটো কিনে দিতে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি টোটোতে ওর পরীক্ষা নিয়ে দেখলাম চালাতে পারছে।
দু’দিন পরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে ওকে টোটো কিনে দিই। কয়েক মাস পরে টোটোর ব্যাটারি খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফের ১৮ হাজার টাকা নেয়। পরে জানতে পারি ও অনেক নেতার থেকেই টাকা নিয়েছে।’
চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান বলেন, ‘আমার কাছে মাঝে মধ্যেই আসত। ওকে কখনও ফেরাইনি। যখনই এসেছে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি।’
সমাজসেবী তথা পুলিশ কর্মী বাপন দাস বলেন, ‘আমার টোটো কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বলেছিলাম, একটা ট্রাই সাইকেল জোগাড় করে দেব। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পরে প্রচুর মানুষ যা লিখল তাতে আমি অবাক।’
নাজিরের মা বলেন, ‘ওকে বারবার বলেছি বাইরে গিয়ে লোকের কাছে টাকা না চাইতে। কোনও কথা শোনে না।’
তিনমাইল এলাকার বাসিন্দা ভীষ্মদেব বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘ছোটবেলায় আমরা একসঙ্গে পড়েছি। ও ছোট থেকে এভাবেই মানুষকে ঠকাতো।’ এ দিন পুরো বিষয়টি সামনে চলে আসায় নাজির অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন, ‘আমি মিথ্যা কথা বলার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আর কখনও এমন কাজ করব না।’