রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি
প্রেম দিবসে প্রিয়জনকে কোটি টাকা উপহার! যেমন–তেমন নয়, একেবারে কোটি টাকার উপহার। তরুণদের ছাপিয়ে এ বারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে–তে ধূপগুড়ির হিরো কাপড়ের দোকানের এক কর্মচারী।
ধূপগুড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র। পেশায় একটি দোকানের কর্মচারী। ৭ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান এই দোকান থেকে। সংসার চলে কষ্টেসৃষ্টে। ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টায় ৬০ টাকা দিয়ে লটারি কেটেছিলেন। আর তাতেই মিলেছে এক কোটি টাকার পুরস্কার। প্রেম দিবসে সেই এক কোটির লটারির টিকিট স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন নিতাই।
ধূপগুড়ির কাপড়পট্টি এলাকায় পুচু বসাকের দোকান। খদ্দের ভালোই হয়। সেই দোকানের কর্মচারী হিসেবে বহুদিন থেকেই কাজ করছেন নিতাই। মাঝেমধ্যেই লটারির টিকিট কাটেন তিনি। টিকিট নিয়ে এসে দোকানের মালিকের হাতে দেন। তিনিই অনেক সময়ে অনলাইনে মিলিয়ে দেখেন টিকিটের নম্বর। তবে বারবারই হতাশ হতে হচ্ছিল নিতাইকে। জীবনের দুর্দশা ঘোচানোর লক্ষ্যে থাকা নিতাইয়ের নম্বর মিলছিল না। দোকানের সহকর্মীরা কখনওসখনও ঠাট্টাচ্ছলে বলতেন, কেন যে টিকিট কাটো দাদা!
তবু হাল ৫০ ছুঁইছুঁই পার করা নিতাই। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আবার একটা লটারি কেটেছিলেন। ৬০ টাকা দামের টিকিট, প্রথম পুরস্কার এক কোটি টাকা। রাতেই খেলা, সকালে ফল। শুক্রবার সকালে অন্যান্য দিনের মতো দোকানের কাজে যোগ দেন নিতাই। পুচু তাঁর মোবাইলে কর্মচারীর টিকিট মিলিয়ে দেখতে থাকেন। একটার পর একটা নম্বর মেলাতে মেলাতে চিৎকার করে ওঠেন পুচু— ‘নিতাই তুই কোটিপতি’। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিতাইও, সত্যিই নম্বর মিলে গিয়েছে অবশেষে।
দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যান নিতাই। প্রেম দিবসের সকালে তখনও এই মফসসল শহর যুগলদের দখলে চলে যায়নি। বাড়িতে গিয়ে লটারির টিকিট স্ত্রী লক্ষ্মী চন্দ্রের হাতে তুলে দেন নিতাই। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এমন উপহার পেয়ে খুব খুশি নিতাইয়ের ঘরনি। নিতাইয়ের বৃদ্ধা মা হতবাক। মেয়ে নন্দিনী ধূপগুড়ির সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রথম সেমেস্টারের ছাত্রী।
নিতাই বলেন, ‘একটা সময়ে এই মেয়ের কলেজের ফি দিতে পারিনি। আমাদের দিন আনতে পান্তা ফুরোয়। মেয়ের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি আমাদের আরও অনেক সমস্যার সমাধান হলো।’ লক্ষ্মীর ভাষায়, ‘মেয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে টাকা দিতে না পারায় পরীক্ষায় বসতে পারেনি। আর কষ্ট থাকবে না আমাদের।’
বাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে নিতাই চলে যান ধূপগুড়ি থানায়। সেখানে গিয়ে পুরস্কার জয়ের কথা বলে সুরক্ষা চান। সঙ্গে ছিলেন দোকানের মালিকও। তিনি বলেন, ‘নিতাই সৎ, ভালো ছেলে। ও কোটি টাকা পাওয়ায় আমরাও খুশি। মেয়েকে ভালো করে পড়াতে পারবে। সংসার চালাতে আর কষ্ট হবে না।’
না, এর পরেও নিজের কাজটি ছাড়বেন না নিতাই। পুচু বসাকের দোকানে কাজ চালিয়ে যাবেন। লটারির টিকিট কেনার খরচটাও বেঁচে যাবে তাঁর!