• হামলার ১৫ বছর পার, এখনও তাড়া করে শিলদার দুঃসহ স্মৃতি
    এই সময় | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, শিলদা ও সালুয়া: ‘শিলদা হামলায় মারা গেলেন স্বামী। তারপর চাকরি পেল আমার ছেলে ঋষি সুব্বা। অসুস্থ হয়ে ছেলেটাও মারা গেল। ওই ঘটনা নিয়ে আমরা কী আর বলব?’ শুক্রবার সালুয়ায় ইএফআর (ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস) ক্যাম্পের কোয়ার্টারে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন সোনা সুব্বা।

    ২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলায় ২৪ জন নিহত জওয়ানের অন্যতম মধুকর সুব্বার স্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যবাসী দেখেছেন কী নৃশংস ঘটনা ঘটেছে!’ পনেরো বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি আর যেন কোনও দিন ফিরে না আসে, এমনটাই দাবি শিলদাবাসীর। একই সুর নিহতদের পরিজনদের গলাতেও।

    পনেরো বছর আগের সেই বিকেলে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন সেই জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরের মতো এ বারও সালুয়ায় ইএফআর হেড কোয়ার্টার খড়্গপুরের সালুয়ায় চলছে প্রস্তুতি। আজ, শনিবার সকালে ‘শহিদ স্মরণ’ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেখানে। নিহত জওয়ানদের অনেকেরই পরিজনেরা থাকবেন শিলদায়, হামলাস্থলে।

    সালুয়া থেকে শিলদা যাওয়ার কথা সোনা সুব্বারও। শিলিগুড়ি থেকে সালুয়ায় এসেছেন জওয়ান অজয় থাপার স্ত্রী রীতা থাপা। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর বড় মেয়ে ইএফআরে চাকরি পান। রীতা ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকেন শিলিগুড়িতে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কাছে।

    এ দিন রীতা বলেন, ‘সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারি না। দেখতে দেখতে ১৫ বছর হয়ে গেল। হামলার ঘটনার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ি এসেছিলেন আমার স্বামী। ১০ তারিখ বাড়ি থেকে চলে যান শিলদায়। চারদিন পর ঘটে গেল ভয়ঙ্কর ঘটনা। কী আর বলব আমরা। যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। শনিবার শিলদায় নিহত জওয়ানদের স্মরণ সভায় ডাকা হয়েছে আমাদের। সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য শিলিগুড়ি থেকে এসেছি।’

    হামলায় নিহত জওয়ানদের প্রত্যেকের পরিবারের একজন সদস্য চাকরি পেয়েছেন। তবে সোনা সুব্বা এ দিন বলেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার পর বউমার চাকরির জন্য সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছে। বউমার চাকরিটা হলে ভালো হয়।’ ওই ঘটনার পরে নিহত জওয়ানদের পরিবার ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন সরকারের তরফে। কিন্তু ভুলতে পারেননি সেদিনের ঘটনা। মনের মধ্যে সে আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়ায় পরিবারের সদস্যদের।

    শিলদার বাসিন্দা ফল বিক্রেতা উৎপল দত্ত বলেন, ‘ওই ঘটনা যেন আর ফিরে না আসে। কত ইএফআর জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিলেন! ভাবাই যায় না!’ এখন ঘটনাস্থলের পাশে নতুন রূপে সেজে শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। শিলদার বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল বলেন, ‘শিলদা এলাকায় ওই দিনটা ছিল কালো দিন। ২৪ জন ইএফআরকে এক সঙ্গে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। সময় পাল্টেছে।’

  • Link to this news (এই সময়)