এই সময়, হালিশহর: নিখোঁজ হওয়ার পর কেটে গিয়েছে ছ’দিন। এখনও হদিস মিলল না হালিশহরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অভ্রদীপ সরকারের (নাম পরিবর্তিত)। গভীর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে ওই ছাত্রের পরিবারের। যদিও পুলিশ ওই ছাত্রের খোঁজে হন্যে হয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। শিয়ালদহ স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজও তারা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ বুধবার রাতে হালিশহর স্টেশন সংলগ্ন একটি সাইকেল গ্যারাজ থেকে অভ্রদীপের সাইকেল উদ্ধার করেছে। গত সোমবার মাধম্যিক পরীক্ষার ঠিক আগের দিন রবিবার রাতে বাড়ি থেকে ফোটোকপি করার নাম করে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় অভ্রদীপ। পরিবার হালিশহর থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে।
পুলিশ ওই ছাত্রের পরিবার ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, পড়াশোনায় ভালো হলেও মোবাইলে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্তি ছিল ওই ছাত্রের। শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগেও সেই আসক্তি কাটেনি তার। যা নিয়ে মায়ের কাছে মাঝেমধ্যে বকুনিও খেত সে। তবে কি মোবাইল গেমের টানেই ওই ছাত্র অন্য কোথাও চলে গিয়েছে?
সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। যে গ্যারাজে সাইকেল রেখেছিল অভ্রদীপ, তার মালিক কল্যাণ রায় বলেন, ‘রবিবার রাতে হন্তদন্ত হয়ে আসে ওই ছাত্র। আমাকে বলেছিল সোমবার রাতে সাইকেল নেবে। কিন্তু আর আসেনি। পরে হালিশহরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিখোঁজের খবর পেয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পুলিশ বাড়ির লোককে এনে সাইকেলটি উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে।’
হালিশহর স্টেশন সংলগ্ন গ্যারাজ থেকে তার সাইকেল উদ্ধার হওয়ায় পুলিশের ধারণা, স্টেশনে সাইকেল রেখে ট্রেনে চেপে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে ওই ছাত্র। ভিন রাজ্যে তার চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। সেই কারণে শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ওই ছাত্র বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কিছু টাকাও নিয়ে বেরিয়েছিল।
এ দিকে ছ’দিন পরেও ছেলের কোনও হদিস না পেয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে পরিবারের। ছেলেটির বাড়িতে গিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী ও হালিশহরের পুরপ্রধান শুভঙ্কর ঘোষ। সুবোধ বলেন, ‘পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওই পড়ুয়ার খোঁজ চালাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দ্রুত ওই ছাত্র তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে আসবে।’
নিখোঁজ ছাত্রের দিদি বলেন, ‘ভাই মাঝেমধ্যে পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে মোবাইলে গেম খেলত। কিন্তু সারাক্ষণ গেমের মধ্যে ডুবে থাকা লক্ষ্য করিনি। সুস্থ অবস্থায় ভাইকে ফিরিয়ে দিক পুলিশ।’ ছাত্রের মা বলেন, ‘কী কারণে ছেলে নিখোঁজ হয়ে গেল, কেউ তাকে আটকে রাখল কিনা বুঝতে পারছি না।’
ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘সবদিক আমরা খতিয়ে দেখছি। ওই ছাত্রের খোঁজে জোরদার তল্লাশি চলছে।’