• প্যাগোডার আদলে মিউজিয়াম, গড়ে উঠবে পার্ক! মোগলমারি ও শরশঙ্কার উন্নয়নে বরাদ্দ রাজ্যের
    এই সময় | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুমন ঘোষ, দাঁতন

    ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল মোগলমারি বৌদ্ধ মহাবিহারের উন্নয়নে বরাদ্দ মিলতে চলেছে রাজ্য বাজেটে। শুধু মোগলমারি নয়, দাঁতনের শরশঙ্কা দিঘি উন্নয়নেও মিলবে বরাদ্দ। যা শুনে বেজায় খুশি দাঁতনের মানুষ। কারণ, এই দু’টি স্থানই যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যটন দফতর রাজ্য বাজেটের বরাদ্দ থেকে মোগলমারির উন্নয়ন বাবদ প্রায় দেড় কোটি এবং শরশঙ্কার উন্নয়নে এক কোটি টাকা দেবে বলে পরিকল্পনা নিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশেদ আলি কাদেরি শুক্রবার বলেন, ‘রাজ্য বাজেটে তো প্রকল্প ধরে বরাদ্দ হয় না। পর্যটনের জন্য বরাদ্দ হয়। মোগলমারি ও শরশঙ্কা দিঘির জন্য ডিটেলড প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা দেওয়া ছিল। সেই খাতে পর্যটন দফতর টাকা দেবে বলে জানিয়েছে।’

    দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান বলেন, ‘দু’টি পর্যটন কেন্দ্রের জন্যই আমরা বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠিয়েছিলাম। তা দেখে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দও মিলতে চলেছে এ বার।’

    বাজেটে বরাদ্দ টাকায় মোগলমারিতে মিউজ়িয়াম ও গেস্ট হাউস তৈরির পাশাপাশি অন্য উন্নয়নমূক কিছু কাজ হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আর শরশঙ্কায় চারটি কটেজ নির্মাণের পাশাপাশি দিঘির চারপাশ সুন্দর করে সাজানো, জল কচুরিপানা–মুক্ত করাও হবে। শরশঙ্কা দিঘিটি প্রায় দেড়শো একর জুড়ে রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এই দিঘি খননের সঙ্গে রাজা শশাঙ্কের নাম জুড়ে রয়েছে।

    বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, এটি প্রায় নালন্দার সমসাময়িক। এখানে হিউয়েন সাঙও এসেছিলেন। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর নানা নমুনা মিলেছে এখানে। এই স্থানটিকে ‘সখি সেনা ঢিবি’ হিসেবেই জানতেন এলাকার মানুষ। ১৯৯৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অশোক দত্ত সুবর্ণরেখার তীরবর্তী এলাকায় প্রাচীন বাংলায় নদী বাণিজ্য সংক্রান্ত পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করতে আসেন। এখানে এসে তাঁর সঙ্গে দাঁতনের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় হয়।

    নরেন্দ্রনাথ ‘সখিসেনা ঢিবি’টি দেখান তাঁকে। ২০০৩ ও ২০০৪ সালে অধ্যাপক অশোক দত্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মোগলমারিতে আসেন এবং খননকাজ শুরু করেন। খনন শুরুর পর থেকেই নানা চমক দেখা দেয়। উঠে আসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

    ২০১২-’১৩ সালে শেষবার খননকাজ হয়েছিল। মোগলমারি বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনু প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই আরও খনন হোক। তা হলে আরও প্রাচীন ইতিহাস উঠে আসতে পারে।’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ির কুড়ুমবেড়া ফোর্ট এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা জাতীয় সৌধের মর্যাদা পেয়েছে। অতনুর ক্ষোভ, ‘তাহলে কেন মোগলমারি জাতীয় সৌধের মর্যাদা পাবে না? তা পেলে কেন্দ্রীয় বাজেট থেকেও অর্থ বরাদ্দ হত। এটির উন্নয়ন ঘটলে আরও বেশি বিদেশি পর্যটকও আসতেন।’ তবে রাজ্য বাজেটে বরাদ্দ মেলায় অবশ্য তাঁরা খুশি।

  • Link to this news (এই সময়)