কাছেই শিলদা বাজারের মতো জনবহুল এলাকা। স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে তিন-চার জনের ছোট গ্ৰুপে ভাগ হয়ে এসেছিল মাওবাদীরা। বিকেল তখন প্রায় পাঁচটা। শিলদার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা ইএফআর ক্যাম্পের জওয়ানরা খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ততক্ষণে গোটা ক্যাম্প ঘিরে ফেলে মাওবাদীরা। নির্বিচারে চলে গুলি। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই হাড়হিম করা ঘটনার স্মৃতি আজও দগদগে। শনিবার সকালে বিনপুর থানার শিলদায় রাজ্য পুলিশের ক্যাম্পে শহিদ তর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ উপস্থিত ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা এবং শহিদ জওয়ানদের পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার দিন পূর্ব পরিকল্পনামাফিক আক্রমণ করেছিল ২৫-৩০ জনের মাওবাদীদের একটি দল। প্রথমে ক্যাম্পের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে চলে গুলি বৃষ্টি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলে এই গোটা অপারেশন। ওই ক্যাম্পে রান্নার দায়িত্বে থাকা রাকেশ লেপচা বলেছিলেন, ‘আমার চোখের সামনেই চার জওয়ান দাউ দাউ করে জ্বলছিলেন। কিছুটা দূরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন দুই জওয়ান।’
ইনসাস, AK-৪৭ দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল মাওবাদীরা। প্রথমদিকে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন জওয়ানরা। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পাল্টা গুলি চালানোর কারণে ৫ জন মাওবাদী নিহত হয় বলে জানা যায়। পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ সঙ্গীদের দেহ একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু অত্যাধুনিক অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যায় তারা। মোট ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল সে দিন। এই ঘটনায় মোট ২৩ জন মাওবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করে মেদিনীপুর অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালত। তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডিজি রাজীব কুমার এ দিন বলেন, ‘জঙ্গলমহলে যে শান্তি বজায় রয়েছে তার জন্য পুলিশ-সহ এই সমাজের সমস্ত মানুষের কৃতিত্ব রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে মাওবাদী দমন করেছিল। আমাদের ৭ থেকে ৮ বছর সময় লেগেছিল। এর জন্য আমাদের অনেককে বলিদান দিতে হয়েছে। প্রায় ৮৮ জনকে শহিদ হতে হয়েছে। আজকের দিনটি আমাদের গভীর শোকের দিন। আজকে শপথ নেওয়ার দিন যাতে সর্বদা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারি।’