• মোবাইল ফোনে ফ্রি ডিজিটাল গোলাপই প্রতিদ্বন্দ্বী আসলের
    এই সময় | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, বর্ধমান: গ্রিটিংস কার্ডের বাজার আগেই খেয়ে দিয়েছিল মোবাইল। এ বার গোলাপের বাজারেও মন্দা ডেকে আনল সেই মোবাইলই। ফুল বিক্রেতাদের ব্যবসায় লাভ করবেন কী, দিন শেষে জুটল শুধু গোলাপের কাঁটা।

    শুক্রবার ভ্যালেনটাইন্স ডে, তাই বর্ধমান শহর জুড়ে গোলাপ বিক্রির ধূম পড়ে যায়। কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি কোথায়? কারণ জানাতে গিয়ে শহরের ফুল ব্যবসায়ী শেখ আক্রম আলি বলেন, ‘আগে এই দিনে প্রেমিক–প্রেমিকারা এক অন্যকে টাটকা গোলাপ দিত। এখন তো মোবাইলেই একসঙ্গে কয়েকশো গোলাপ পাঠিয়ে দিচ্ছে। মোবাইলে উপচে পড়ছে ডিজিটাল গোলাপ আর আমাদের ফুল পড়েই থাকছে।’

    শুধু শহর বা শহরতলি নয়, গ্রামীণ এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরাও বেশি করে কিনেছিলেন গোলাপ। নানা রং, নানা আকৃতির। সেই লাভের টাকা গোলাপের কাঁটা হয়ে বিঁধছে। অবস্থা এমন যে, লাভ দূরের কথা গোলাপে লগ্নি করা টাকা ফেরত এলেই বেঁচে যাবেন অনেকে।

    বর্ধমান শহর থেকে ভাতার, বলগোনা, সেহারাবাজার, মেমারির ফুল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সকালের দিকে কিছুটা বিক্রি হলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উবে যায় গোলাপের চাহিদা। বর্ধমান কার্জন গেট এলাকার ফুল ব্যবসায়ী বামদেব মোহান্ত বলেন, ‘তিন ধরনের গোলাপ এনেছিলাম। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করেছি। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার দুশো টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। এর পর কী হবে বুঝে নিন।’

    এলাকারই আর এক ব্যবসায়ী সঞ্জিত সাহার কথায়, ‘আগামী দু’টি দিন ছুটি পড়ে যাওয়ায় আরও সমস্যা হয়ে গেল। অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা থাকলে হয়তো সমস্ত গোলাপ বিক্রি হয়ে যেত। এখন লাভের আশাই ছেড়ে দিয়েছি।’

    তিনি জানাচ্ছেন, সকালে ৩০ টাকায় গোলাপ বিক্রি করলেও বিকালে দাম নেমে এসেছে ১০ টাকায়। তাও কিনছে না কেউ। টাউনহল পাড়ার ফুল ব্যবসায়ী মুক্তি বৈরাগ্যেরও এক দশা। বলেন, ‘পাঁচ হাজার টাকার গোলাপ নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রি হয়েছে ১৯০০ টাকার। লাভের কথা ভুলে গিয়েছি।’ ভাতার, সেহারাবাজারের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যও এক। দেড়–দু’হাজার পিস আনলেও বিক্রি হয়েছে মোটে আড়াই–তিনশো গোলাপ।

    গোলাপ বিক্রিতে ভাটার কারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন মোবাইলকেই। বর্ধমানের এক ফুল ব্যবসায়ী বলছেন, ‘সকালে ঘুম ভেঙেই যদি কেউ দেখেন, তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে ডিজিটাল গোলাপের বন্যা বইছে, তা হলে তিনি কি আর আমাদের থেকে পয়সা খরচ করে আসল গোলাপ কিনবেন? শিক্ষা হলো, সামনের বছর থেকে গোলাপ কেনার আগে দশবার ভাবতে হবে।’

    কেউ আবার গোলাপে প্রেম নিবেদন করায় আদিখ্যেতা দেখছেন। ভাতারের দাশরথী হাজরা মোমোরিয়াল কলেজের ছাত্র অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘ভ্যালেনটাইন্স ডে মানেই গোলাপ কিনতে হবে তা তো নয়। আর বড্ড দাম। একটা গোলাপ বলছে ৩০ টাকা। তা হলে সেই গোলাপ না কেনাই ভালো।’

    ক্রেতাদের এ হেন সব মন্তব্য শুনে বর্ধমানের এক ফুল বিক্রেতা জনপ্রিয় গানের সুরে বলছেন, ‘গোলাপের অলি আছে, ফাগুনেরও আছে বাহার, সকলেরই সাথী আছে, শুধু ব্যবসায় লাভ নেই আমার।’

  • Link to this news (এই সময়)