বাঁকুড়ায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম শ্যামলের, শোরগোল
বর্তমান | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার নাম উল্লেখ করায় বাঁকুড়ার রাজনৈতিক ও শিক্ষামহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিধায়ক থাকাকালীন শ্যামলবাবু বেশ কয়েকজনের নাম তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্যামলবাবু সদ্য বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের(ডিপিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই সময় নতুন করে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়ানোয় শাসক দল তৃণমূল যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। শ্যামলবাবু অবশ্য পুরো বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন।
শ্যামলবাবু বলেন, আমি সম্প্রতি ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছি। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমার রাজনৈতিক কেরিয়ার খতম করার জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে। বিজেপি সিবিআইয়ের মাধ্যমে ওই চক্রান্ত করছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার তফসিলি জাতি অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলি বিজেপি দখল করেছিল। এবার ওইসব কেন্দ্রে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রগুলি যাতে আমরা পুনরুদ্ধার করতে না পারি, তারজন্যই বিজেপি চক্রান্ত করছে। তাছাড়া যে সময়ে নাম সুপারিশের কথা বলা হচ্ছে, ওইসময় আমি সবে বিধায়ক হয়েছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সেভাবে পরিচয়ই হয়নি। তাহলে আমার সুপারিশে কীভাবে চাকরি হবে? চার্জশিটে এসব ভিত্তিহীন কথা উল্লেখ করা সিবিআইয়ের উচিত হয়নি।প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার বলেন, সিবিআই স্বশাসিত সংস্থা। বিজেপি ওই সংস্থাকে পরিচালনা করে না। তবে কে বা কারা শ্যামলবাবুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, সেটা তাঁর খোলসা করা উচিত। নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকার খেলা চলেছে। শ্যামলবাবুর উচিত তাঁর সুপারিশ করা চাকরিপ্রাপকদের ব্যাপারে বিস্তরিত তথ্য সিবিআইকে দেওয়া। চাকরিপ্রাপকরা কাকে টাকা দিয়েছেন, সেব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করা উচিত। তাহলে সকলেরই উপকার হবে। তদন্ত প্রক্রিয়াও দ্রুত শেষ হবে।
উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের চার্জশিটের বিষয়টি সামনে আসতেই বাঁকুড়ায় শোরগোল পড়ে যায়। কোতুলপুর থেকে ভোটে জেতার পর শ্যামলবাবু রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি বাঁকুড়া শহরের একটি কলেজে অধ্যাপনাও করেন। একসময় জেলা তৃণমূলে শ্যামলবাবু শেষ কথা বলতেন। ঘাসফুল শিবিরের এহেন হেভিওয়েট নেতা মাঝে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তবে সম্প্রতি ফের শ্যামলবাবু গুরুত্ব পাচ্ছিলেন। তারমধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় শ্যামলবাবুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। বিশেষ করে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই বিষয়টি সামনে আসায় বিতর্ক অন্য মাত্রা পেয়েছে। শ্যামলবাবু বা অন্যান্যদের সুপারিশ করা নাম ধরে ধরে এদিন জেলাজুড়ে চর্চা হয়েছে। ওই তালিকায় থাকা কারা বর্তমানে জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন, তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। যদিও তালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রাপকরা নিজেদের যোগ্য বলেই দাবি করেছেন। তবে এনিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।