• আগের রাতে বাবার মৃত্যু, বুকে পাথর রেখে মাধ্যমিক দিতে গেল মুসকান
    প্রতিদিন | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুমন করাতি, হুগলি: বুক ফেটে যাচ্ছে কান্নায়। তবুও চোখের জল আটকে পরীক্ষা দিতে গেল মেয়ে। কয়েক ঘণ্টা আগেই তার বাবা মারা গিয়েছেন। মেয়ে যখন পরীক্ষার হলে, তখন বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তারাজল গ্রামে।

    চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুসকান খাতুন। বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই তার বাবা আবদুল কায়েম অসুস্থ হয়ে পূর্ব বর্ধমানের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর মেয়ের কাছেও পৌঁছয়। সেসময় চোখের জল বাঁধ মানেনি। পরে মনকে শান্ত করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে সে। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সরল। মেয়েকে নিয়ে আবদুল কায়েমের অনেক স্বপ্নও ছিল। সেসব কথাই বারবার মনে করতে থাকে মেয়ে। সে কারণেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকেনি মেয়ে। মন শক্ত করে পরীক্ষায় বসেছে মুসকান।

    পাণ্ডুয়া হাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুসকান। তার সিট পড়েছে বৈঁচী বাটিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। শনিবার সকালে বাবার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাবাকে শেষ দেখা দেখে পরীক্ষা দিয়ে যায় সে। তার পরীক্ষা চলাকালীনই বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বাবা চাইতেন মেয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। কৃষক বাবার স্বপ্ন সত্যি করতে চায় মুসকান।

    বাটিকা বৈঁচী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দীপ্তেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার কথা জানতে পারেন। তার পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, অথবা পরীক্ষাকেন্দ্রে সে যদি কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার জন্য অ্যাম্বুলেন্স থেকে সবরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। দীপ্তেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাবার মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। তবে ছাত্রীর মানসিক দৃঢ়তা দেখে ভালো লাগছে।” পরীক্ষার্থী মুসকান বলেন, “বাবা সবাইকে বলতেন, আমার মেয়ে পড়াশোনায় ভালো। পরীক্ষা দিচ্ছে, ভালো নম্বর পাবে। চেষ্টা করব বাবার সেই স্বপ্নকে সফল করার।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)