শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রয়াত, মুখ্যমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ, মাল্যদান, শ্রদ্ধা ও গান স্যালুটে চিরবিদায়
বর্তমান | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তিনি বাংলায় গান গাইতেন। বাংলার গান গাইতেন। শনিবার সকালে, ভাষা দিবসের আগেই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে থামল দৃপ্ত কণ্ঠের সেই গান। ৮৩ বছর বয়সে জীবন সাগরের ওপারে ডিঙা ভাসালেন সুরকার, গীতিকার, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়। শিল্পীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নামে সঙ্গীতজগতে। শোকবিহ্বল মুখ্যমন্ত্রীও।
বছরের শুরু থেকেই অসুস্থতা কাবু করেছিল তাঁকে। জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এমনকী মৃদু হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল। নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নিতেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দেখতেও গিয়েছিলেন শিল্পীকে। গত সোমবার রাতে অবস্থার অবনতি হয়েছিল। স্থানান্তরিত করা হয় আইটিইউতে। শুক্রবার আরও অবনতি হয় শারীরিক অবস্থার। শনিবার সকাল ১০টা বেজে ৪০ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শিল্পীর প্রয়াণের খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন। বিকেলে রবীন্দ্র সদনে তাঁর মরদেহ শায়িত ছিল। সওয়া চারটে নাগাদ সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়াত শিল্পীকে মাল্যদান করেন। সমবেদনা জানান শিল্পীর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে। শিল্পীর পরিবারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিন গান স্যালুট জানানো হয় শিল্পীকে। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, সাংসদ দোলা সেন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু সহ আরও অনেকে। মরণোত্তর দেহ দান করে গিয়েছিলেন তিনি। তাই এসএসকেএম হাসপাতালেই ফিরিয়ে আনা হয় মরদেহ।
১৯৪২ সালে ২৫ জুন বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর চুঁচুড়ায় চলে আসে তাঁর পরিবার। প্রথাগত সঙ্গীতের শিক্ষা তাঁর ছিল না। অথচ ছোটবেলা থেকেই কবিতায় সুর দিতেন। প্রথম সুর কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র প্রতুল অধ্যাপনা করেছেন। ছিলেন গেজেটেড অফিসারও। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’। ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’ প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ মুক্তি পেয়েছিল ২০২২ সালে। বাঙালির মননে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে অমর গান ‘আমি বাংলায় গান গাই’। ঘনিষ্ঠ তথা চিকিৎসা চলাকালীন শিল্পীর সর্বক্ষণের সঙ্গী জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোজই গানের আসর বসাতেন প্রতুলদা। খালি গলায় গেয়ে উঠতেন সেই পরিচিত গান— ‘আমি বাংলায় গান গাই...’। দন্ত চিকিৎসক বারীন রায়কে প্রথম শুনিয়েছিলেন এই গানটি।
তাঁর জনপ্রিয় গানের তালিকাটি দীর্ঘ, ‘ডিঙা ভাসাও’, ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’। প্রতুল বলতেন, ‘মাচায় উঠে যদি হাততালি না পাওয়া যায়, তাহলে জীবনের কোনও অর্থ থাকে না।’ গানের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার পছন্দ করতেন না তিনি। তাঁর খালি গলার গানেই উদ্বেল হয়েছেন শ্রোতারা। আজ সেই সুরের তরণী বেয়ে এক অন্তহীন মায়াভরা পথে বিদায় নিলেন তিনি।