দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: মহম্মদ ইউনুসের জমানায় ‘নতুন’ বাংলাদেশে ফের পুরোদমে ‘সক্রিয়’ দাউদ ইব্রাহিমের ডি-কোম্পানি। মদত দিচ্ছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। হাসিনা পরবর্তী ওপার বাংলার মাটিতেই চলছে ভারতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চক্রান্ত। পাকিস্তান থেকে আগত পণ্যের ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’ হাসিনার আমলে ছিল বাধ্যতামূলক। সেসব এখন বন্ধ। এপারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই সুযোগে গত সেপ্টেম্বর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে মজুত করা হয়েছে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার জাল নোট। কমপক্ষে ছ’টি বড় ‘স্ট্যাক ইয়ার্ড’ বানানো হয়েছে। বিশেষ করে এ রাজ্যের মালদহ সংলগ্ন চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন রাজশাহীর বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে সেগুলি। সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম এবং বিমানপথে ঢাকা হয়ে পাকিস্তান থেকে আনা হচ্ছে ভারতীয় জাল নোট। সেগুলি মজুতের জন্য নতুন করে ২০টি ট্রানজিট ক্যাম্প চালু করেছে আইএসআই।
ভারত বিরোধী এই চক্রান্তে পাক গুপ্তচর সংস্থার ‘অফিস’ ইউনিটের দোসর হয়েছে বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’এর ‘ব্যুরো এক্স’। বিভিন্ন সূত্র থেকে এপারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, সীমান্তের ওপারে যে জাল নোট মজুত হয়েছে, সেগুলির সিংহভাগই ২০০ টাকার। রয়েছে ৫০০ টাকার নোটও, যা ছাপা হয়েছে দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিমের ‘মেহেরান পেপার মিলে’। পাকিস্তানের সিন্ধের কোটরি এলাকার ওই পেপারমিলটি আইএসআই-এর ‘অফিস’ ডেস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন পাকিস্তান সিকিওরিটি প্রিন্টিং কন্ট্রোলের অধীন।
এপারের গোয়েন্দারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে একের পর এক ভারতীয় জাল নোটের কনসাইনমেন্ট পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কনসাইনমেন্টটি এসেছে চট্টগ্রামে। সেটাও গত নভেম্বর মাসে করাচি থেকে পণ্যবাহী ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝান’ জাহাজে চেপে। এছাড়া দুবাই থেকে ঢাকা (এয়ার আরবিয়া, ফ্লাই দুবাই, এমিরেটস) ফ্লাইটে পাকিস্তানের ‘ডিপ্লোম্যাটিক ট্যাগ’ লাগানো ট্রলি ব্যাগ ও স্যুটকেসে ভরে আনা হয়েছে ভারতীয় জাল নোট। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসিনার সময়ে বারবার অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল ঢাকার আইএসআই’এর ‘ট্রানজিট ক্যাম্প’গুলি। যাত্রাবাড়ি, কদমতলি, বাদামতলির সেই ঘাঁটিগুলি এখন ফের সক্রিয়। সেখান থেকেই ট্রাক, লরিতে চাপিয়ে জাল নোট নিয়ে গিয়ে মজুত করা হয়েছে মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর লাগোয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, আজতপুর, কানসাট বাজার, বিনোদপুর ও গোমস্তাপুরের মতো স্ট্যাক ইয়ার্ডে। মুর্শিদাবাদের লালগোলা, ভগবানগোলা ও আখরিগঞ্জ লাগোয়া রাজশাহীর রামচন্দ্রপুর, গোদাগাড়ি, দিয়ার মানিকচক এবং খিদিরপুর মধ্যচরেও মজুত করা হয়েছে জাল নোট। পাচার প্রক্রিয়া যাতে মসৃণ হয়, তাই সীমান্তের এই সমস্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি ‘গোলমাল’ পাকাচ্ছে বাংলাদেশিরা।