• সিপাহী বিদ্রোহের সূতিকাগার বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান রক্ষার জন্য পুরসভার বিশেষ উদ্যোগ ...
    আজকাল | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনানীদের অদম্য লড়াইয়ের প্রতীক বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান।  আর এর সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি এই ময়দানকে সংরক্ষণ ও পরিষ্কার রাখতে এবার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করল বহরমপুর পুরসভা। 

    ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যায়, ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা বাংলা-বিহার-ওড়িশার তৎকালীন নবাব মীরজাফরের কাছ থেকে 'সুবা বাংলা'র নতুন ক্যান্টনমেন্ট তৈরি করার জন্য প্রায় ৪০ একর জায়গা নিয়েছিল। বর্তমানে বহরমপুর শহরের ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মাঠকে কেন্দ্র করে বাংলার নবাবের কাছ থেকে জমি পাওয়ার মাত্র দু'বছরের মধ্যেই ১৭৬৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তৈরি করে ফেলেছিল এক নতুন ক্যান্টনমেন্ট। 

    সবুজ গাছপালা ঘেরা এই মাঠের চারপাশে আজও রয়েছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অনেক বাংলো এবং ব্যারাক, যা বর্তমানে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক সহ অন্য উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মীদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

    বহু ঐতিহাসিক দাবি করেন, ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রান্তে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হওয়ার বেশ কয়েক মাস আগেই ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৭ সালে বহরমপুরে মোতায়ন থাকা  ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ১৯ দেশীয় রেজিমেন্টের জওয়ানরা প্রথম প্রথম ব্রিটিশ  সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। শোনা যায় সেই দিনই মাঠের চার কোণে থাকা কামানের সামনে একাধিক বিদ্রোহী সেনাকে দাঁড় করিয়ে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ বাহিনী।

    যদিও তারপরেও সেই বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ থামানো যায়নি ।বিভিন্ন কারণে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও বহরমপুর থেকে শুরু হওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সিপাহীদের এই লড়াই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছে। বছর কয়েক ধরেই বহরমপুর পুরসভা সিপাহী বিদ্রোহের সূতিকাকার বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। মাঠের চারপাশে বসেছে, হাই মাস্ট আলো। এর পাশাপাশি পুরসভার তরফ থেকে সিপাহী বিদ্রোহের স্মারক হিসেবে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের চারপাশে থাকা কমানগুলোকেও সংরক্ষণ করা হয়েছে। মাঠের চারপাশ ঘিরে তৈরি হয়েছে 'জগার্স ট্রাক'।

    শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহাসিক এই মাঠকে পরিষ্কার এবং সুন্দর রাখার জন্য এবার পুরসভার তরফ থেকে মাঠ জুড়ে বসানো হলো একাধিক ডাস্টবিন। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রতিদিন সকাল-বিকাল অসংখ্য মানুষ এই মাঠে খেলাধুলা, হাঁটা এবং অন্যান্য কারণে আসেন। তাঁরা মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে যান নানারকমের ব্যবহৃত আবর্জনা। তার ফলে ঐতিহাসিক এই মাঠ যেমন নোংরা হচ্ছে, তেমনি অন্যের চলাফেরা এবং বসার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয়। 

    বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখার্জি বলেন, 'এই ঐতিহাসিক মাঠের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই আমরা সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শুধু সৌন্দর্য বাড়ানো নয়, এটি যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকেও আমরা কড়া নজর রাখছি। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আবেদন করব, তাঁরা যেন এই ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নেন।'

    তিনি জানান, 'মাঠের সৌন্দর্য বজায় রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করা ছাড়াও যাঁরা আবর্জনা ফেলবেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
  • Link to this news (আজকাল)