পরীক্ষার আগেই কঠিন পরীক্ষায় বসতে হয়েছিলো ১৬ বছরের রমেশ যাদবকে। সিবিএসসি মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েক সপ্তাহ আগেও সে ঠিকমতো হাঁটতে পারতো না। প্রথমে সামান্য ঝিঁঝি ধরা অনুভূতি, একা দাঁড়াতেও কষ্ট হতো তার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে শরীরের সংবেদনশীলতা ও নড়াচড়া একেবারেই হারিয়ে ফেলছিল সে। মা বাবার সাহায্য ছাড়া এক পাও চলতে পারত না। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে গ্রাস করছিলো হতাশা।
কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষার পর জানা যায়, রমেশ যাদবের মেরুদণ্ডে একটি টিউমার রয়েছে, যা স্নায়ুর উপর চাপ তৈরি করছিল। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে স্থায়ী পক্ষাঘাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে অস্ত্রোপচারের সময় নিয়ে দ্বিধায় পড়ে রমেশের পরিবার। তাঁরা চেয়েছিলেন পরীক্ষার পর অস্ত্রোপচার হোক। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, এতদিন অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচার না করলে রমেশের পা সারাজীবনের জন্য অকেজো হয়ে যেতে পারে।
২১ জানুয়ারি হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের পরিচালক ড. অমিতাভ চন্দ এবং তাঁর টিম সফলভাবে রমেশের অস্ত্রোপচার করেন। জটিল এই অপারেশনে ব্যবহার করা হয় উন্নত প্রযুক্তি, যার সাহায্য টিউমারের চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে। অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রমেশের শারীরিক উন্নতি দেখা যায়। ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও শুরু করে দেয়। কয়েক সপ্তাহের কারোর সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারে সে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রমেশ জানিয়েছে, ‘আমি ভেবেছিলাম আর কোনোদিন হাঁটতে পারব না। কিন্তু চিকিৎসকদের জন্য আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য পরীক্ষায় ভাল ফল করা।’
ছেলের শারীরিক অবস্থা দেখে রমেশের পরিবার এই বছর পরীক্ষা না দেওয়ার কথা ভাবছিল, কিন্তু চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করেছিলেন যে সে পরীক্ষায় বসতে পারবে।
এখন, অস্ত্রোপচারের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, রমেশ তার সিবিএসসি মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ১২ ফেব্রুয়ারি ফলো-আপ চেকআপের জন্য হাসপাতালের গিয়ে একা হেঁটে ঢোকে রমেশ। এই দৃশ্য দেখে চিকিৎসকরা গর্বিত। তাঁরা বলেন, ‘রমেশ নিজেকে তার জীবনের কঠিন পরীক্ষায় জয়ী প্রমাণ করেছে। এখন সে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। ওর সাফল্যের জন্য শুভকামনা রইল।’