হেমাভ সেনগুপ্ত, বোলপুর
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সুখবর। শান্তিনিকেতনের বল্লভপুর ডিয়ার পার্কে ঘুরতে আর লাগবে না এন্ট্রি-ফি! তবে ডিয়ার পার্ক ঘুরে দেখতে ও পর্যটকদের ভিড় সামাল দিতে একাধিক নতুন নিয়ম চালু করেছে বন দপ্তর। পর্যটকরা বিশ্বভারতী, সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাট, কঙ্কালীতলা, কোপাই ঘুরতে ও সময় কাটাতে পছন্দ করেন। পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে বল্লভপুর অভয়ারণ্যও তাঁদের অন্যতম গন্তব্য।
একটা সময়ে বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভ-সহ বাংলায় সব জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের এন্ট্রি-ফি দিতে হতো। বিষয়টি নজরে আসতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশ করেন। তারপরেই এই বছরের জানুয়ারি থেকে বিনামূল্যে প্রবেশের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। রাজ্যের বন দপ্তরের অধীনে একাধিক পার্কে প্রবেশ নিঃশুল্ক বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বন দপ্তর। সেই মতো গত ২৩ জানুয়ারি বীরভূম ডিভিশনের বন দপ্তরের কাছে এই মর্মে একটি নির্দেশিকা আসে। তারপরেই শান্তিনিকেতন ডিয়ার পার্কে প্রবেশ নিঃশুল্ক ঘোষণা করে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট।
এতে দারুণ খুশি ভ্রমণপিপাসুরা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে পর্যটকদের ভিড়। সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে শান্তিনিকেতন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতিও পেয়েছে। দেশের পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্ব আরও বেড়েছে। কলকাতার বেহালা থেকে এসেছিলেন মহাশ্বেতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘ফ্রি টিকিট হলে সবার ভালো লাগে। ডিয়ার পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ত্রুটি না-হয় সে দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’
এত দিন ১০০ টাকা জনপিছু টিকিট কেটে ডিয়ার পার্কে ঢুকতে হতো। বন দপ্তর সূত্রে খবর, এখন ৫৮টি বেশি হরিণ রয়েছে এই পার্কে। এটি রাজ্য অন্যতম হরিণ প্রজনন কেন্দ্রও। তথ্য বলছে প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন পর্যটক আসেন এই ডিয়ার পার্কে। জন প্রতি ১০০ টাকা করে টিকিটে আয় হতো ভালোই। কিন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ সুনিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার পরেই টিকিট ব্যবসা তুলে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, হরিণের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করতে একাধিক নিয়ম চালু করেছে বন দপ্তর। বোলপুরের রেঞ্জার জ্যোতিষ বর্মন এ বিষয়ে বলেন, ‘টিকিট থেকে যে আয় হয়, সেটা আমরা রাজ্যের ফান্ডে পাঠিয়ে দিই। আমরা কোনও খরচ করতে পারি না। হরিণদের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা আলাদা ভাবে আসে। এখানে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন, খাতায় নাম লেখা, আইডি কার্ড দেখার কাজগুলিতে যুক্ত থাকবে।’
মূলত ভিড়ে বন্যপ্রাণীরা যেন বিরক্ত না-হয় সে দিকেও থাকবে বিশেষ নজরদারি। বনদপ্তরের সিদ্ধান্ত, নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ জনের বেশি পর্যটক ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রবেশের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। পার্কে ঢোকার মুখেই বন দপ্তরের খাতায় পর্যটকদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। আইডি কার্ড দেখিয়ে তাঁর নম্বর নথিভুক্ত করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কখন তাঁরা পার্কে ঢুকছেন সেই বিষয়টিও উল্লেখ থাকছে। ভিড় এড়াতে পার্কের নিরাপত্তারক্ষীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। ডিএফও রাহুল কুমার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশিকার পরেই এন্ট্রি-ফি তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে পর্যটকদের পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে যাতে খুব ভিড় না-হয় সেটাও নজর রাখা হচ্ছে।’