• শ্বশুরবাড়ির চক্ষুশূল, ছেলে হতেই সুয়োরানি!
    এই সময় | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পরপর দুই সন্তান। দু’টিই মেয়ে। এমন ‘গুরুতর অপরাধ’–এর পর শ্বশুরবাড়ি করাই দায় হয়ে উঠেছিল নিধি দেবীর। শ্বশুরবাড়ির গঞ্জনা, স্বামীর অত্যাচারে একসময়ে মানসিক ভারসাম্যই হারিয়ে ফেলেন। তার পরে কেমন করে যে বিহার ছেড়ে বাংলায় চলে আসেন, তা আর জানা যায়নি। বাড়ির বৌকে খুঁজে বের করার কোনও গরজ শ্বশুরবাড়ির ছিল না। শেষে ঠাঁই হয় এ রাজ্যের হোমে। ততদিনে নিধি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

    কিন্তু নিধিকে নিতে কারও দেখে মেলেনি। এরপর যখন পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন তখনই গল্পে ট্যুইস্ট। স্বামীর আর তর সয়নি। একগাল হাসি নিয়ে শুক্রবার স্ত্রী–পুত্রকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।

    বিহারের চম্পারণ জেলার বেতিয়ায় বিয়ে হয়েছিল নিধির। পরপর দু’টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে সকলের চক্ষুশূল হয়ে পড়েন। একটা সময়ের পর মানসিক ভারসাম্যই হারিয়ে ফেলেন। বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। কী ভাবে যেন এসে পৌঁছন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে। অচেনা এক তরুণীকে রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। বারাসত আদালতের নির্দেশে তাঁকে পাঠানো হয় মধ্যমগ্রামের সরকারি হোমে। সেই সময়ে মেডিক্যাল পরীক্ষায় জানা যায় নিধি সাত মাসের গর্ভবতী।

    এদিকে হোমে আসা ইস্তক নিধি বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এমনকী খাওয়া–দাওয়াও ছেড়ে দেন। কিন্তু নিধি না বলতে পেরেছিলেন নিজের নাম, না ঠিকানা। পুলিশও নিধির বাড়ি খুঁজে বের করতে পারেনি। এরপর মধ্যমগ্রাম হোম থেকে নিধিকে পাঠানো হয় বিধাননগরে। বিধাননগরের হোম থেকে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। বলাই বাহুল্য, তার পরেও খোঁজ মেলেনি বাড়ির লোকের।

    তখনই যোগাযোগ করা হয় হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো (হ্যাম) ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘৮ সেপ্টেম্বর বিধাননগরের একটি সরকারি হোম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জানতে পারি মধ্যমগ্রামের একটি সরকারি হোম থেকে এক তরুণীকে পাঠানো হয়েছে বিধাননগরের হোমে। তরুণীর খোঁজ পেতেই আমাদের দ্বারস্থ হয় হোম।’ হ্যাম রেডিয়োর লোকজন নিধির সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন বিহারের কোনও জেলায় তাঁর বাড়ি। বিহারের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে শেষে খোঁজ মেলে নিধির বাপের বাড়ির। জানা যায় নিধির নাম–পরিচয়।

    বাপের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে অবাক হয়ে যান হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা। দেখা যায় নিধির বাপের বাড়ির লোকেরা জানতেনই না, যে তাঁদের মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে নেই। তাঁরাই জানান, দুই নাতনি হওয়ার পর থেকেই নিধির উপরে চরম মানসিক অত্যাচার শুরু করেন স্বামী তায়েশ প্যাটেল। তাঁর শর্ত একটাই— ছেলে চাই। যেনতেন প্রকারেণ। তায়েশের বাড়ির ঠিকানায় যখন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা পৌঁছন ততক্ষণে তিনি বেপাত্তা। কারণ স্ত্রীর খোঁজ দিতেই যে লোকজন আসছে, তা জানতে পেরে তায়েশ আগেভাগেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন। থানা–পুলিশ করেও তায়েশের খোঁজ পাওয়া যায়নি। শ্বশুরবাড়ি নিধির দুই মেয়েকে রাখলেও বৌমাকে ফিরিয়ে নিতে চায়নি। নিধির বাপের বাড়িও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

    এ দিকে নভেম্বরে পুত্রসন্তান প্রসব করেন নিধি। সেই খবর পাঠানো হয় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। অম্বরীশ জানান, অবশেষে তায়েশের ফোন নম্বর পাওয়া যায়। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি।’ পুত্রসন্তানের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন নিধির বর। জিজ্ঞেস করেন, ‘কব লানা পড়েগা উসকো?’ অবশেষে দিনক্ষণ ঠিক হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে তাঁর এবং নিধির পরিচয়ের শংসাপত্র নিয়ে শুক্রবার হোমে হাজির হন তায়েশ। তারপর স্ত্রী–বাচ্চাকে নিয়ে চম্পারণে রওনা দেন তিনি।

    শ্বশুরবাড়িতে নিধির এ বার সুয়োরানির সম্মান!

  • Link to this news (এই সময়)