পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
সাতবছর আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও এক সীমান্ত দিয়ে ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন বাংলাদেশের কুমিল্লার তরুণী আয়েশা আখতার (৩৮)। সে সময়ে জটিল স্ত্রী রোগে ভুগছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, এ দেশে চিকিৎসা করানো। কিন্তু ভারতে আসার পরে দিগভ্রান্তের মতো ঘুরতে ঘুরতে এক সময়ে স্মৃতি লোপ পায় তাঁর। আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের কয়েকজন মহিলা আয়েশাকে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখেন। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে এথেলবাড়ির সাজু তালুকদারের ‘হেভেনস শেল্টার’ হোমে নিয়ে যান তাঁকে। সেই থেকে সাজুর হোম হয়ে ওঠে আয়েশার ঠিকানা।
মানসিক ভারসাম্য পুরোপুরি হারিয়ে ফেলায় পরিবার–পরিত্যক্ত ভেবে নিয়ে হোমের আর পাঁচজন আবাসিকের মতো তাঁর সেবা করতে শুরু করেন সাজু। সঙ্গে আয়েশার স্মৃতি ফেরাতে শুরু হয় মানসিক চিকিৎসা।
সম্প্রতি ওই চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেন তরুণী। ধীরে ধীরে নিজের দেশ, মহল্লা ও বাড়ির ঠিকানা জানাতে সক্ষম হন। আর তাতেই উল্লসিত সাজু আয়েশাকে নিজের ঠিকানায় ফিরিয়ে দিতে জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশীর দ্বারস্থ হন। কিন্তু সমস্যা তৈরি করে দু’দেশের কূটনৈতিক বিষয়। প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক ডামাডোল আয়েশার দেশে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশের সহায়তায় আয়েশার বাড়ির ঠিকানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। একবার মেয়েকে শেষ দেখা দেখতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন শয্যাশায়ী বাবা জয়নাল আবেদিন।
আয়েশা শনিবার বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই। এখানে আর মন টিকছে না। অপারেশনের কথা ভেবে ভারতে এসেছিলাম। বাড়িতে মা–বাবা–ভাই–বোন সকলে আছে। সাজুদা আমাকে দেশে ফেরার জন্য সাহায্য করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় যাওয়া হচ্ছে না।’
হেভেনস শেল্টার হোমের কর্ণধার সাজু বলেন, ‘সাত বছর আগে মাদারিহাটের কয়েকজন মহিলা আয়েশাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এরপর তাঁর চিকিৎসা চলে। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে তিনি আমাদের নিজের ঠিকানা জানান। আমি চিন্তায় পড়ে যাই। বাংলাদেশের একজন বাসিন্দাকে কী ভাবে রাখব, তাও পুলিশ সুপারকে জানাই।’
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশারা ছ’ভাই, তিন বোন। এতদিন না ফেরায় সকলেই ভেবেছিলেন তিনি মারা গিয়েছেন। এরপর বাড়ির লোকেদের আবেদনের ভিত্তিতে আয়েশাকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সবকিছু আটকে গিয়েছে। এরই মধ্যে মা এবং দাদা মারা গিয়েছেন। বাবা শয্যাশায়ী। আয়েশাকে অবশ্য সে সব কিছুই জানানো হয়নি।
আয়েশার ভাই মাসুম ফারুখ শনিবার টেলিফোনে ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘আমরা ভাবতে পারিনি দিদি বেঁচে আছেন। ভারতের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সমস্ত কাগজপত্র পাঠিয়েছি। আসলে বাংলাদেশের আইনি জটিলতার কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছি। বাবা মৃত্যুপথযাত্রী। তিনি দিদিকে একবার দেখতে চাইছেন।’ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মহিলা নাগরিককে বাড়িতে ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি।’