• পোষ্য ‘ডিকু’র শ্রাদ্ধবাসরে দু’রকমের মাছের পদ, আর কী কী জানেন?
    এই সময় | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি

    ভাতের সঙ্গে মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপির ঘণ্ট। বাটা মাছের ঝাল। রুই মাছের কালিয়া। টম্যাটো আর কুলের চাটনি। দু’রকমের মিষ্টির সঙ্গে ছিল গঙ্গারামপুরের দই।

    মেনু শুনলে মনে হতেই পারে, অন্নপ্রাশন বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন। কিন্তু যদি বলা হয়, এই মেনু কোনও শ্রাদ্ধবাসরের, তা-ও আবার বেড়ালের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের, চমক জাগবে বৈকি। এমনই চমকপ্রদ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ি শহরের নয়াবস্তি পাড়া। শনিবার সিনহা বাড়ি গমগম করে উঠল ‘ডিকু’র কথা মনে করে।

    জলপাইগুড়ির সর্বশিক্ষা মিশনের কর্মী সুপর্ণা সিনহা পশুপ্রেমী। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বাড়িতে বেড়ালের বাস। কোলেপিঠে করে তাদের মানুষ করেন। অসুখবিসুখ হলে নিজেই শুশ্রূষা করেন বেড়ালের। বছর পঞ্চাশের সুপর্ণার আপনজন বলতে ওরাই। চারটি বেড়ালকে তিনি বড় করছিলেন— বুলেট, রকেট, জুলজুল জামাই আর ডিকু। এদের মধ্যে ডিকুর বয়সই সবচেয়ে কম ছিল। সেই ডিকু ক’দিন আগে ছেড়ে চলে যায় সুপর্ণাকে। গত ৩ তারিখ হঠাৎ এক প্রতিবেশী খবর দেন, তাঁদের বাগানে ডিকু পড়ে আছে। ছুটে যান সুপর্ণা। ততক্ষণে বেড়ালটি মারা গিয়েছিল।

    সেই বেড়ালের জন্যই শ্রাদ্ধের আয়োজন করেন তিনি। বৈদিক মন্ত্র পড়ে, গীতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় ডিকুর। চার জন পুরোহিত এই কাজের তদারকি করেন। সুপর্ণা আমন্ত্রণ করেছিলেন বন্ধু–স্বজনদের। তাঁদের জন্যই ছিল খাবারের ঢালাও আয়োজন। সুপর্ণা বলেন, ‘বাড়ির প্রিয়জন মারা গেলে আমরা শ্রাদ্ধের আয়োজন করি। পোষ্যরাও তো প্রিয়জন। তাই ডিকুর মৃত্যুর ১৩ দিনের মাথায় শ্রাদ্ধ করলাম।’

    পুরোহিত ডালিম বাগচী, লিটন চক্রবর্তীদের কাছেও এই অভিজ্ঞতা অভিনব। সব নিয়ম মেনেই তাঁরা শ্রাদ্ধের কাজ করেছেন। কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি। পুরোহিতরা বলেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রে ১৬টি ভোজ্য দান করা হয়। বেড়ালের ক্ষেত্রে ১০টি করা হয়েছে। পিণ্ডদানও করা হয়েছে।’

    শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন মৌসুমি দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে পোষ্য থাকলে তাকে নিজের সন্তানের মতো বড় করে তোলা হয়। সুতরাং তার মৃত্যু হলে শ্রাদ্ধশান্তি করা যেতেই পারে। বিষয়টি ব্যতিক্রমী হলেও এখন আর বিরল নয়।’

    শুধু শ্রাদ্ধের আয়োজন করা নয়, ডিকুর মৃত্যুরহস্য জানতে থানায় গিয়েছিলেন সুপর্ণা। সুস্থ-সবল পোষ্যের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, এমনটাই মনে হয়েছিল তাঁর। বলেন, ‘আমি যখন গিয়ে ওকে দেখি, তখন প্রাণ ছিল না। ও সন্তানসম্ভবা ছিল। আমার সন্দেহ, কেউ বিষ দিয়ে মেরেছে। ময়না তদন্তের জন্য কোতোয়ালি থানায় আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ওরা রাজি হয়নি।’

    তারপরেও হাল ছাড়েননি সুপর্ণা। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যস্থতায় ৫ তারিখে জলপাইগুড়ি মর্গে ময়নাতদন্ত করানো হয় ডিকুর। পশু বিশেষজ্ঞ রাজেশ্বর সিং ময়নাতদন্ত করেন। যদিও তাতে বিষ খেয়ে মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)