সমীর মণ্ডল, কেশপুর
উন্নয়ন কোন খাতে হবে, তা নিয়ে ‘মতানৈক্য’! এক দিকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি, অন্য দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহবনী উন্নয়ন পর্ষদ এবং এলাকার বিধায়ক।
মোহবনী উন্নয়ন পর্ষদের অধীনের রয়েছে কেশপুর ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এবং গড়বেতা–৩ ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে কেশপুরের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজার এলাকায় একটি করে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য শৌচাগার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক একটি শৌচাগার করতে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে বলে খবর। মোট খরচ হবে প্রায় চার কোটি টাকা। এখানেই বাদ সেধেছেন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতি ও বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।
তাঁদের দাবি, চার কোটি টাকা দিয়ে শৌচাগার তাঁরা চান না। বরং ওই টাকায় গ্রামের রাস্তাঘাট, নিকাশি নালার উন্নয়ন হোক। মোহবনী উন্নয়ন পর্ষদের কাছে এ নিয়ে আবেদনও করেছেন সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির জনপ্রতিনিধিরা।
ঘটনার কথা স্বীকার করছেন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্ত গোরাই। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পর্ষদের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। এত কোটি টাকা খরচ করে কমিউনিটি টয়লেট না করে রাস্তাঘাট ও ড্রেন করা হোক। আমি ও বাকি প্রধান ও উপপ্রধান মিলে এই আবেদন জানিয়েছি। এই বিষয়ে জেলাশাসকের কাছেও আবেদন জানিয়েছি।’
অন্য দিকে, কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, ‘বোর্ড মিটিংইয়ে বসেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ একা সিদ্ধান্ত নেননি। কথা হয়েছে, বাজার এলাকায়, যেখানে হাট-বাজার রয়েছে সেখানে শৌচাগার, বিশ্রামাগার ও এলাকার সৌন্দর্যায়ন ইত্যাদি হবে। তবে আমি ইঞ্জিনিয়ার নই। কোথায় কত খরচ হবে তা জানি না। তা দেখবেন ইঞ্জিনিয়াররা। আর যাঁরা এ সবের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না।’ জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘এমন প্রস্তাব আমার কাছে আসেনি। অন্য কোথায় জানিয়েছেন কি না আমার জানা নেই।’
কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য শৌচাগার বা কমিউনিটি টয়লেটও তো দরকার! এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে চিত্ত গোরাই বলেন, ‘এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে! অকারণে এর পিছনে এত খরচের কী দরকার? বরং, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলে এলাকার উন্নতি হবে আরও। সেটা এ মুহূর্তে বেশি কাজের।’ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মোহবনীকে ঘিরে উন্নয়ন হচ্ছে। তবে গ্রামে আরও বেশি রাস্তাঘাট, ড্রেন দরকার। আলো, জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে সেগুলো দেখা হবে।’
তবে মোহবনীবাসীর দাবি, এখনও সবার ঘরে শৌচাগার হয়নি! না হয়েছে গ্রামের সব রাস্তাঘাট, না হয়েছে ড্রেন! গ্রামে কয়েকটা আলো লাগানো হলেও জ্বলে না। সন্ধ্যে হলে গোটা গ্রামে নেমে আসে অন্ধকার। গ্রামের একাধিকা রাস্তা এখনও ঢালাই হয়নি। ক্ষুদিরাম বসুর সম্পর্কিত নাতি গোপাল বসু বলেন, ‘কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যা হচ্ছে উপর উপর।’