এই সময়: নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সময়ে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণের মতো অভিযোগে দায়ের হওয়া যে ১০টি মামলা রাজ্য সরকার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে শেখ সুফিয়ান, আবু তাহেরের মতো প্রায় ৭০ জন অভিযুক্ত আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন না। ২০২০ সালের জুন মাসে দু’দফায় হলদিয়া মহকুমা আদালত রাজ্যের তরফে এই মামলাগুলি খারিজের আবেদনে সিলমোহর দেয়।
সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দু’টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই দু’টি মামলার বিচারের ভার যায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘মামলাগুলি খারিজের জন্য রাজ্যের এই আর্জি জনসাধারণের মনে ভুল বার্তা দেবে। ফলে মামলাগুলি ফের চালু করে বিচার শুরু করতে হবে নিম্ন আদালতকে।’
এর আগে ২০১৯ সালের একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ একই ভাবে ২০২১ সালের ৩ মার্চ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। নিম্ন আদালত তাতে সায়ও দেয়। কিন্তু ওই দিনই নিম্ন আদালতের রায়ের ঘণ্টা দুয়েক বাদে হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে। আনিসুরকে ফের জেলে ফিরতে হয়। সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন চলাকালীন গোলমালে ২০০৭ সালে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। সেই সময়ে একদিকে পুলিশের গুলি, অন্যদিকে সিপিএম–তৃণমূল সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে নন্দীগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণের মতো ঘটনায় পুলিশ প্রায় ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বহু মামলা হয় গোটা হলদিয়া মহকুমার বিভিন্ন থানায়। তার মধ্যে খেজুরি ও নন্দীগ্রাম থানায় থাকা ১০টি মামলা তুলতে চেয়ে নিম্ন আদালতে আবেদন করে রাজ্য। নিম্ন আদালত রাজ্যের আবেদনে সিলমোহর দেয়।
নিম্ন আদালতের সেই রায় খারিজ করতে গিয়ে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের পর্যবেক্ষণ, ‘ভোটে হিংসা হোক বা ভোট পরবর্তী হিংসা— গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য হিংসা ত্যাগ করা উচিৎ। সমাজকে হিংসামুক্ত করতে এগিয়ে আসতে হবে রাজ্যকেই। যে কোনও ধরনের অপরাধকে কঠোর হাতে মোকাবিলা করা রাজ্যের দায়িত্ব। খুনের মতো অভিযোগে মামলা প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে, তাতে সমাজে ভুল বার্তা যাবে।’
বিচারপতি বসাকের স্পষ্ট অবস্থান, অভিযুক্তদের বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে। মামলা প্রত্যাহার কখনওই জনস্বার্থে হতে পারে না। এর ফলে জনগণ ক্ষতির মুখে পড়বেন। এমনকী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চাইলেও এই মামলা প্রত্যাহার করতে পারে না।