অর্ণব দাস, বারাসত: যত দিন যাচ্ছে দত্তপুকুরে যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। আগেই জানা গিয়েছে, জম্মু থেকে ধৃত মহম্মদ জলিল গাজি নিহতের মুন্ডু ধর থেকে আলাদা করেছিল। এবার তদন্তে উঠে এল সেই সময় নিহত হজরত লস্করের হাত-পা চেপে ধরে সহযোগিতা করেছিল ধৃতের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলেই কাটা মাথা লোপাট করতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন বাজিতপুরের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। শেষে বাড়ির আশেপাশেই হজরতের মাথা লুকিয়েছিল জলিল। সে নিজে একথা স্বীকার করার পাশাপাশি তার স্ত্রী ধৃত সুফিয়া ও আরেক ধৃত ওবায়দুল গাজিও জিজ্ঞাসাবাদে একই কথা জানিয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় জম্মুর সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম সাম্বা থেকে চতুর্থ অভিযুক্ত মহম্মদ জলিল গাজিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে রাজ্যে আনা হয়েছে। রবিবার ধৃত জলিলকে বারাসত আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।পাশাপাশি হেফাজত শেষের পর ওবায়দুলকেও এদিন আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, এবার ঘটনায় ধৃতদের একসঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা কোথায় মুন্ডু লুকিয়েছে তা জেনে সোমবার তল্লাশি চালানো হবে। ঘটনার আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তাও জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, খুনের ঘটনার দুদিন পরই নিহতের পরিচয় জানতে পেরে হজরতের আত্মীয় ওবায়দুল গাজি এবং প্রাক্তন প্রেমিকা পূজা দাসকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জানতে পারেন অপরাধমূলক জগতের আক্রোশেই থেকেই এই খুনের পরিকল্পনা। তারপরই ঘটনাস্থল সংলগ্ন বাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার স্বামী জলিলের হদিশ মেলে। পুলিশ আরও জানতে পারে, ধৃত জলিলই হজরতকে ফোন করে গাইঘাটা থেকে দত্তপুকুর ডেকেছিল। তারপর ৩ ফেব্রুয়ারি সে এলাকা ছাড়ে। পালিয়ে যাওয়ার পরেও স্ত্রী সুফিয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ছিল জলিলের।
জলিল এবং সুফিয়া দুজনেই আগে জম্মুতে কাজ করত। সেই সূত্রে জলিল জম্মুতে পালিয়ে থাকতে পারে অনুমান করেন তদন্তকারীরা। সেই অনুযায়ী, বামুনগাছি, শিয়ালদহ এবং কলকাতা রেল স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা। তাতেই নিশ্চিত হওয়া যায় জম্মু পালিয়েছে অভিযুক্ত। এরপর চারজনের একটি দল জম্মু পৌঁছয়। সেখান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রাম থেকে ভাঙাচোরা জিনিস ফেরি করাকালীন জলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।