বাংলাদেশিদের ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি সীমান্তে, অনুপ্রবেশের পরই দেহব্যবসায় যুবতীরা
বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: মোটা টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি মহিলা ও যুবতীদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আনা হচ্ছে। তারপর সীমান্ত লাগোয়া এলাকাতেই তাদের ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই ভুয়ো নথি ব্যবহার করে এদেশের নানা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের দেহব্যবসায় নামানো হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁর যোগ উঠে আসছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিস।
কয়েকসপ্তাহ আগে ভীমপুর থানার পুলিস এক বাংলাদেশি মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছিল। সেই মহিলা তখন ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছিল। তাকে জেরা করে গোয়েন্দারা সীমান্ত এলাকায় ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির বিষয়টি জানতে পারে।
নদীয়া সহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন জেলায় আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের জাল বিস্তৃত। ওই দেশের অচলাবস্থা এই চক্রের কাজ আরও মসৃণ করেছে। কারণ, সেখানে বিশৃঙ্খলার কারণে অনেকেই ভারতে আসতে চাইছে। সম্প্রতি সিআইডি আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের কিংপিন বনগাঁর জগদীশ ঘোষ ওরফে জগাকে গ্রেপ্তার করেছে।
একমাস আগে নদীয়ার ভীমপুর থানার রাঙিয়াপোতায় এক বাংলাদেশি মহিলা ও দালালকে বিএসএফ আটক করে। তাদের ভীমপুর থানার পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতদের জেরা করে পুলিস উত্তর ২৪পরগণার মানিক বিশ্বাসের খোঁজ পায়।
মানিক বনগাঁ, বারাসত সহ বিভিন্ন জায়গায় দেহব্যবসার দালালের কাজ করত। ধৃত বাংলাদেশি মহিলাকেও ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়ে দেহব্যবসায় নামিয়েছিল। জানুয়ারির শেষদিকে ব্যারাকপুরের ঘোলা থানা এলাকা থেকে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। মানিকের সঙ্গে বনগাঁর জগার যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ধৃত বাংলাদেশি মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির বিষয়টি জানা যায়। তবে তার কাছ থেকে কোনও পরিচয়পত্র মেলেনি।
পুলিস জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ থেকে কিশোরী, তরুণীদের এনে রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
তারপর সেখানে ‘এসকর্ট গার্ল’ হিসেবে বা নিষিদ্ধপল্লিতে ওই মহিলাদের দেহব্যবসায় নামানো হচ্ছে।
ভীমপুরে ধৃত মহিলা বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল। সেখানেই তার ভুয়ো আধার, ভোটার কার্ড বানিয়ে দিয়েছিল মানিক। ধৃত মহিলা বাংলাদেশে ফেরার পথে ধরা পড়ে।
কিন্তু সেই মহিলা চার-পাঁচমাস ধরে এদেশেই ছিল। বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা না করলে আদৌ কি ওই মহিলা ও মানিক ধরা পড়ত? গোয়েন্দাদের অনুমান, এরকম অনেক মহিলা ভুয়ো পরিচয়পত্রের সুবাদে দিনের পর দিন ‘নাগরিক’ হিসেবেই ভারতে থাকছে।
তবে শুধু বনগাঁ নয়, নদীয়া জেলাতেই ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার চক্র রয়েছে। অতীতে জাল পরিচয়পত্র সহ ধরা পড়া অনুপ্রবেশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কয়েকবার হাঁসখালির নাম উঠে এসেছিল। সেখান থেকেই ওই অনুপ্রবেশকারীরা ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়েছিল।