সিকিমে তিস্তা ৩ নম্বর বাঁধ নতুন করে তৈরির ছাড়পত্র কেন্দ্রের
বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
কৌশিক ঘোষ, কলকাতা: প্রায় দেড় বছর আগে পাহাড় থেকে নেমে আসা বিপুল পরিমাণে জলস্রোতের ধাক্কায় উত্তর সিকিমের চুংথামে নির্মীয়মাণ তিস্তা ৩ নম্বর বাঁধটি ভেঙে পড়ে। তাতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল সিকিম ও সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে। ওই ঘটনায় প্রায় একশো মানুষের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি সম্পত্তিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক। ওই বাঁধটি নতুন করে নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রক।
‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডের’ (জিএলওএফ) মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি সিকিমের ওই এলাকায় যেকোনও সময় হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সিকিমের ওই অংশ ভূমিকম্পপ্রবণ। ভূমিকম্প হলেও বাঁধের ক্ষতি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাঁধ নির্মাণের সময় এবার সতর্কতামূলক একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে তিস্তা বাঁধ নির্মাণের অনুমতি পুনরায় দেওয়ায় পরিবেশকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। সিকিমে তিস্তা নদীতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একাধিক বাঁধ নির্মাণ নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছিল। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবরের ঘটনাটির পর সেই বিতর্ক আরও বেড়েছে। তিস্তা-৩ বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট।
আগে তিস্তা বাঁধ নির্মাণে কংক্রিট ও পাথরের বাঁধুনি ব্যবহার করা হয়েছিল। নতুন নির্মাণে বাঁধ যাতে আরও শক্তপোক্ত হয় তার জন্য এবার শুধু কংক্রিট ব্যবহার করতে হবে। আগে প্রতি সেকেন্ডে ৭ হাজার কিউবিক মিটার হারে জলস্রোত আটকানোর মতো পরিকাঠামো করা হয়েছিল। কিন্তু জিএলওএফএ’র জেরে প্রবল জলস্রোত বাঁধটির ওই কাঠামোয় ধরে রাখতে পারেনি। বাঁধ ভেঙেই বিপুল জলরাশি নেমে এসেছিল। এবার জলস্রোত ধরে রাখার পরিকাঠামো বাড়িয়ে প্রায় ২০ হাজার কিউবিক মিটার করতে হবে। এর জন্য আগের তুলনায় বাঁধ উঁচু করা হবে দ্বিগুণ (প্রায় ১২০ মিটার)। সিকিমের উঁচু এলাকায় অবস্থিত গ্লেসিয়ার বা হিমবাহযুক্ত লেকগুলি থেকে জল উপচে আসছে কি না তার উপর নজরদারি ব্যবস্থা আগের তুলনায় উন্নত করা হয়েছে। জিএলওএফ পরিস্থিতি হলেই যাতে বাঁধগুলিতে সতর্কবার্তা পৌঁছে যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সরকারের দাবি।
জিএসআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর শিখেন্দ্র দে জানান, তিস্তা নদীতে বাঁধ তৈরি করার আগে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ পুরো এলাকাটি স্পর্শকাতর। উপগ্রহ চিত্র থেকে এখনও দেখা যাচ্ছে, সিকিমের উঁচু এলাকায় অবস্থিত লেকগুলিতে হিমবাহ গলা জল জমা হওয়ার ফলে সেখানে জলের চাপ বাড়ছে। ফলে জিএলওএফ এর মতো ঘটনা সেখানে আবার যেকোনও সময় ঘটে যেতে পারে। হিমালয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সিকিম এমনিতে ভূমিকম্পপ্রবণ। ভূমিকম্প হলে লেকের বাঁধ ফেটে জল বেরিয়ে আসার পাশাপাশি বাঁধের ক্ষতিও হতে পারে। পরিবেশরক্ষা সংগঠনগুলি অবশ্য অভিযোগ করছে, আগামী দিনে বড় বিপদের আশঙ্কা জেনেও প্রভাবশালী লবির চাপে পড়ে বিপুল ব্যয়ে তিস্তা বাঁধ ফের নির্মাণে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। -ফাইল চিত্র