• মধ্যসত্ত্বভোগী-শূন্য বাজারই লক্ষ্য, কৃষকদের  থেকে সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই রাজ্যের
    বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় নাজেহাল আম জনতা। খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার জানুয়ারিতে সামান্য কমলেও এখনও তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া (৪ শতাংশ) লক্ষ্যমাত্রার উপরেই রয়েছে। চলতি অর্থবর্ষের বেশির ভাগ সময়েই শাক-সব্জি সহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া থাকায় সংসার টানতে হিমশিম খেতে হয়েছে মধ্যবিত্তকে। শাক-সব্জির মূল্যবৃদ্ধির অনেকগুলি কারণের মধ্যে অন্যতম হল ফড়ে বা মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। সামান্য দামে কৃষকদের থেকে ফসল কিনে শহরের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে এঁদের মুনাফা আসে। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মাঝেমধ্যে বাজারে কোনও পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরির পিছনেও থাকে ফড়েদের কারসাজি। এই কারবার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য প্রস্তাবিত রাজ্য বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যে আরও ৩৫০টি সুফল বাংলা স্টল এবং ২০০টি সব্জি ক্রয় কেন্দ্র চালুর কথা ঘোষণা করেছেন  স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। প্রশাসনিক এবং বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই পদক্ষেপ কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। কারণ, সুফল বাংলা স্টলে বিক্রির জন্য ফসল কেনা হয় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে। রাজ্যজুড়ে আরও এতগুলি সুফল বাংলা স্টল চালু হলে সরাসরি ফসল কেনার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে। একইভাবে ক্রয় কেন্দ্র বৃদ্ধি হলে আরও সহজে ন্যায্য মূল্যে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বেচতে পারবেন কৃষকরা। কোনও ফড়ের উপর আর নির্ভর করতে হবে না তাঁদের।


    রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি নিয়ন্ত্রিত বাজার ও হাটগুলিতে ২০০ ধরনের সব্জি কিনতে এই বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য। এই সমস্ত কেন্দ্রে কৃষকরা নিজেদের ফসল সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন। ফলে খাদ্যপণ্য গুদামজাত করে রেখে দাম বাড়ানোর খেলাও বন্ধ হবে বলে আশা করছেন  রাজ্যের পদস্থ কর্তারা। প্রসঙ্গত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে মাঝেমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকমাস আগে এরকম এক বৈঠকে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘শাক-সব্জি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ন্যায্য মূল্যে পাওয়া রাজ্যবাসীর অধিকার। এই অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলে আমি সহ্য করব না।’ সেই সূত্রে তিনি বাজারগুলির উপর নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশও দিয়েছিলেন। বর্তমানে রাজ্যে ৬৪৬টি সুফল বাংলা বিক্রয় কেন্দ্র আছে। সেখান থেকে আলু, পেঁয়াজ সহ নানা সব্জি ন্যায্য মূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় রাজ্য সরকার। মাছও বিক্রি করা হয়। কোনও সব্জির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেলে, তা ন্যায্য মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার বড় উপায় হল এই কেন্দ্রগুলি। তাই রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না।
  • Link to this news (বর্তমান)