• ফেসবুক জমানায় মহিলাদের উপর অপরাধ বেড়েছে ৫২ শতাংশ, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’য় নারীসুরক্ষা শিকেয়
    বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: ফেসবুকের জন্ম ২০০৬। হোয়াটসঅ্যাপ তার তিন বছর পর। আর ২০১০ সালের পর থেকে এই দুই ‘ভাই’ প্রায় সমানভাবে ভারতে জনপ্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়ার জগৎ এখন এটাই—ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ। এই দুই ভাইয়ের জমানাতেই দেশজুড়ে মহিলাদের উপর অপরাধের পারদ চড়ছে হু-হু করে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টেই মিলেছে তার প্রমাণ। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে ভারতে নারীকেন্দ্রিক অপরাধ বৃদ্ধির হার প্রায় ৫২ শতাংশ! যদিও এই সময়ে অন্যান্য ‘কনভেনশনাল ক্রাইম’ যেমন, খুন-জখম, অপহরণ, ডাকাতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। 


    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০১০ সালে দেশে মহিলাকেন্দ্রিক অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছিল ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৮৫টি। অর্থাৎ তারা ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং কিংবা অন্যান্য অপরাধের শিকার। মন্ত্রকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, সেই বছর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৫০ হাজার ৫৭৪ জন। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্মলগ্নের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনা টানতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে পরিসংখ্যানবিদদের। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, দেশে এক বছরে অপরাধের শিকার হওয়া মহিলাদের অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৫৬টি। তার মধ্যে ধর্ষণের মামলা ৩১ হাজার ৫১৬টি এবং শ্লীলতাহানি ৮৩ হাজার ৩৪৪টি। মহিলা-সুরক্ষা কি এখন এতটাই কমে গিয়েছে? বাগুইআটির বাসিন্দা দেবযানী ঘোষাল বলেন, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে মেতে রয়েছেন মোদি। কিন্তু এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার খপ্পরে পড়ে মহিলাদের নিরাপত্তা যে তলানিতে ঠেকছে, তা নিয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ আছে?’ 


    মেটা জানাচ্ছে, বর্তমানে ভারতে ফেসবুক ব্যবহার করেন প্রায় ৩৮ কোটি মানুষ। তার মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ মহিলা। অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে অভ্যাস রয়েছে ৬০ কোটি দেশবাসীর। তার মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী। অপরাধবিদদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী মহিলাদের মধ্যে ১২ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত কিশোরী-যুবতীর সংখ্যাই বেশি। আর তারাই টার্গেট অপরাধীদের। প্রেমের জালে জড়িয়ে অপরাধের বলি করা হয় তাদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, নারীকেন্দ্রিক অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী বা অভিযুক্ত নির্যাতিতার পরিচিত। কলকাতা পুলিসের এক আধিকারিকের কথায়, ‘আগে দেখা যেত, বেশি অভিযোগ পরিবার কিংবা বন্ধুদের বিরুদ্ধেই। তবে ইদানীং সেই ট্রেন্ড বদলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী দাবি করেন, অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয়েছে। কিংবা সে পুরনো বন্ধু। মাঝে যোগাযোগ না থাকলেও ফেসবুকের মাধ্যমে ফের আলাপ জমেছে।’ ঠিক যেমনটা হয়েছে সম্প্রতি গরফায়। এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। পুলিস জানিয়েছিল, দু’জনের পড়াশোনা একই স্কুলে। মাঝে যোগাযোগ ছিল না। ঘনিষ্ঠতা সদ্য বেড়েছিল? সৌজন্যে? সোশ্যাল মিডিয়া। 
  • Link to this news (বর্তমান)