নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই প্রথম চালু হল ‘ডিপ্লোমেট অব ন্যাশনাল বোর্ড’ (ডিএনবি)-এর ৬ বছরের কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি (সিটিভিএস) পাঠ্যক্রম। এটি চালু হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিটিভিএস বিভাগে। এই পাঠ্যক্রমের দু’টি আসনের মধ্যে একটিতে ভর্তি হয়েছেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করা এক চিকিৎসক। অন্য আসনে পড়াশোনা করতে এসেছেন ঝাঁসি থেকে এমবিবিএস করা উত্তরপ্রদেশের এক ছাত্র। প্রসঙ্গত, এমবিবিএস পাশ ছাত্রছাত্রীরাই এই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হতে পারেন। আর এটি এমসিএইচ (সিটিভিএস)-এর সমতুল্য। পঞ্চম বছরেই মূল পাঠ্যক্রম শেষ হয়ে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে যায়। তারপর এমবিবিএস শেষে এক বছরের ইন্টার্নশিপের মতোই রেসিডেন্টশিপ করতে হবে।
দেশজুড়ে বেসরকারি ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ৬ বছরের পাঠ্যক্রম। বন্ড চুক্তি না থাকায় আসন পূরণ হতেও সমস্যা হয় না। সেখানে জেনারেল সার্জারিতে তিন বছরের এমএস করে, বন্ড সার্ভিস শেষ করে ফের তিন বছর ধরে এমসিএইচ করে, তারপর এমসিএইচ-এর বন্ড সার্ভিস শেষ করে চাকরিতে ফেরা বা প্র্যাকটিস জমাতে জমাতে কোনও চিকিৎসকের মধ্যবয়স পার হয়ে যায়। সেদিক থেকে ডিআরএনবি নামক এই হার্ট ও ভাসকুলার সার্জারির পাঠ্যক্রমে কোনও বন্ড সার্ভিসের ব্যাপার নেই। তবে অসুবিধার দিক হল, ৬ বছরের পাঠ্যক্রমের মাঝখানে যদি কেউ কোর্স ছাড়তে চান, তিনি নানা জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন।
ডিএনবি বোর্ড সূত্রের খবর, শুধু বাংলাই নয়, দেশের পূর্বাঞ্চলে সরকারি ক্ষেত্রে প্রথম এই পাঠ্যক্রম শুরু হল। সরকারি ক্ষেত্রে আগে এই পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে চেন্নাই, মুম্বই সহ হাতেগোনা দু’-তিনটি জায়গায়। এ বিষয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিটিভিএস-এর প্রধান এবং ডিএনবি বোর্ডের কর্মসমিতির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ সুব্রত দে বলেন, ‘আশা করছি, এতে আমাদের বিষয়টি আগের জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে।’
সূত্রের খবর, সামগ্রিক দীর্ঘসূত্রিতার জন্য বছরের পর বছর ধরে দেশজুড়ে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারিতে এমসিএইচ পাঠ্যক্রমের আসন ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় হার্ট সার্জেনের সংখ্যা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। পরিস্থিতি সামলাতে ডাঃ দেবী শেঠির মতো বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় হার্ট সার্জেন ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের উপদেষ্টা এমন পাঠ্যক্রম চালুর পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন। বছর ছ’য়েক আগে কলকাতার মুকুন্দপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে এই পাঠ্যক্রম চালু হয়। সেটাই রাজ্যে প্রথম। তবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে এই পাঠ্যক্রম চালুর জন্য আত্মত্যাগও করতে হয়েছে। সেখানকার সিটিভিএস বিভাগে ৬টি আসনে এমসিএইচ পড়ানো হতো। কিন্তু বছর বছর সেখানে মাত্র ১-২ জন করে ভর্তি হতেন। পূর্বতন এমসিআই’র নিয়ম অনুযায়ী, এমসিএইচ চালু থাকলে এই ৬ বছরের কোর্স চালু করা সম্ভব নয়। তাই মেডিক্যালকে এমসিএইচের ৬টি আসনই বন্ধ করে দিয়ে তবেই নয়া কোর্স চালু করতে হয়েছে।