• মাটি মাফিয়াদের নিয়ে মুখ খুললেই বিপদ! কোদাল হাতে সকাল-বিকেল সড়ক সাফাই করেন বাসিন্দারাই
    বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: সকাল-বিকেল কোদাল হাতে নিয়ে রাস্তা সাফাই করছেন এলাকার বাসিন্দারা! এছাড়া তাঁদের কোনও উপায় নেই! গোটা শীতকালে শাসন, কামদুনি, কীর্তিপুর, কৃষ্ণমাটি, ধোকরা, দাদপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের কাছে এটাই যেন দস্তুর। ঘটনা হল, এসব এলাকায় মাটি মাফিয়াদের দাপাদাপি। দিনের বেলা তাদের ততটা চোখে না পড়লেও সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাটি পাচারকারীদের রমরমা। চলে সারারাত। বড় বড় ডাম্পার, লরি থেকে শুরু করে ছোটহাতি বা ট্রাক্টরে চলে মাটি পাচার। তার ফলে পিচের রাস্তা ভরে যায় মাটি আর ধুলোয়। শীতের সময় প্রতিদিন কোদাল হাতে নিয়ে সেই মাটিই সরাতে দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। কারণ, পিচরাস্তার উপর থেকে মাটি না সরালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যেমন বাড়ে, তেমনই ধুলোময় হয়ে থাকে চারপাশ। তাই নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থেই কোদাল হাতে নেমে পড়েন বাসিন্দারা। 


    বারাসত, হাড়োয়া, দত্তপুকুর, দেগঙ্গা সহ বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার মাটি বিক্রি হয়। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, স্থলভাগ থেকে মাটি কাটার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কিন্তু তা মানা হয় না। তাছাড়া, এভাবে অবৈধ এই কারবারের ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। বারাসত থেকে টাকি রোড ধরে এগলেই মাটি পাচারের দৃশ্য চোখে পড়বে। টাকি রোড থেকে আমিনপুর হয়ে শাসন পর্যন্ত ঘুরলেই মাটি পাচারের চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে যায়। দাদপুর, কৃষ্ণমাটি, কামদুনি, শাসন, কীর্তিপুর, দাদপুর, ফলতি-বেলিয়াঘাটায় রাস্তার দু’ধারে পার্কিং করা রয়েছে বড় বড় ডাম্পার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভেড়ি সংস্কারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার মাটি কেটে পাচার করা হয়। এই চক্রে জড়িত রয়েছে একাধিক রাঘববোয়াল। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় বিকট শব্দে মাটি কাটা। লরি, ডাম্পারের শব্দে কান পাতা দায় হয় তখন। সারা রাত চলে ওই শব্দ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী নেতারা এই কারবারের মাথায় রয়েছেন। তাই সাহস করে কেউ মুখ খোলেন না। খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন কেউ কেউ। সূত্রের খবর, দূরত্ব অনুযায়ী মাটির দাম ঠিক হয়। একটি বড় ডাম্পার ভর্তি মটির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং এক লরি মাটির দাম দু’হাজার টাকা পড়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শাসক দলের নেতারা মানুষের এই সমস্যা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘মাটি নিয়ম মেনে কাটা হয় কি না, তা আমরা নিয়মিত খতিয়ে দেখি। রাতেও অভিযান চালানো হয়।’
  • Link to this news (বর্তমান)