• গুলির দাম ৭০–৮০ টাকা, চোরাবাজারে ৫০০–৭০০! ধৃত আরও ১
    এই সময় | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: কলকাতার বিবাদী বাগের অতি পুরোনো লাইসেন্সড দোকান থেকে কত বন্দুক ও গুলি পাচার হয়েছে, তার উত্তর বার করাই গোয়েন্দাদের তদন্তে এখন অন্যতম ‘ফোকাস’। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা বেঙ্গল এসটিএফের তদন্তকারীরা এটাও জানতে চান, কোন সময় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ বেআইনি ভাবে বেরিয়ে কোথায় কোথায় পৌঁছেছে অফিসপাড়ার ওই লাইসেন্সড দোকান থেকে।

    ওই তদন্তে আরও এক জনকে বন্দুক ও কার্তুজ–সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেঙ্গল এসটিএফ জানায়, ধৃতের নাম ফারুক মল্লিক। বছর তিরিশের ওই যুবকের কাছ থেকে একটি ডাবল ব্যারেল বন্দুক এবং ১২ বোরের চারটি কার্তুজ উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।

    শনিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার বাগানাটি গ্রাম থেকে বেঙ্গল এসটিএফ গ্রেপ্তার করে ফারুককে। এই নিয়ে গুলি–বন্দুকের এই পাচার চক্রে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ। বেঙ্গল এসটিএফ সূত্রের খবর, বিবাদী বাগের দোকানটির তিন জন মালিক ও কর্মীদের আজ, সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

    অস্ত্রশস্ত্র পাচারের এই ঘটনার তদন্তে শুক্রবার গভীর রাতে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার ঈশ্বরীপুরের বছর সত্তরের হাজি রশিদ মোল্লাকে। তার বাড়ি থেকে প্রায় ২০০টি কার্তুজ এবং একটি ডাবল ব্যারেল গান উদ্ধার করা হয়। হাজিকে জেরা করেই জানা যায় ফারুকের নাম।

    গোয়েন্দাদের বক্তব্য, হাড়োয়ার ফারুক দোনলা বন্দুকটি কিনেছিল জীবনতলার হাজির কাছ থেকেই। হাজি ওই বন্দুক জোগাড় করে লাইসেন্সড দোকান থেকে। বিবাদী বাগের ওই পুরোনো লাইসেন্সড দোকানে এই রকম বন্দুকের বেচাকেনা হয়। ফারুককে রবিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসটিএফের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

    বেঙ্গল এসটিএফের দাবি, বিবাদী দোকানটির স্টক রেজিস্টারে উল্লেখ থাকা কার্তুজের সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবে থাকা কার্তুজের স্টকের হিসেবে গরমিল রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, দোকানে গুলির স্টক আসে সরকারি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে। কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের আর্মস অ্যাক্ট শাখার এক জন অফিসারের ওই দোকানে গিয়ে লিখিত নথিতে উল্লিখিত কার্তুজের সংখ্যার সঙ্গে দোকানের বাক্সে থাকা গুলির স্টক মেলানোর কথা। তার আগে, কত সংখ্যক গুলি কাদের বিক্রি হচ্ছে কোন কোন লাইসেন্সে, সেই সব তথ্য একটি ফর্মে লিখে রিজ়ার্ভ ফোর্সের আর্মস অ্যাক্ট শাখায় জমা দেওয়ার কথা প্রত্যেক মাসে।

    আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি একটি লাইসেন্সের বিনিময়ে একলপ্তে সর্বাধিক ২৫টা গুলি কিনতে পারেন, বছরে সর্বাধিক ৫০টা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, যে ধরনের সরকারি গুলি উদ্ধার হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটি ৭০–৮০ টাকায় লাইসেন্সড দোকান থেকে বিক্রি হয়, তবে কালোবাজারে প্রতিটি কার্তুজের দাম ৫০০–৭০০ টাকা। দোকানের কর্মী, নদিয়ার শান্তিপুরের জয়ন্ত দত্তকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দোকানের কেবল জয়ন্তই জড়িত, সে কথা মানতে নারাজ গোয়েন্দাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, হিসেবের বাইরে গুলি দোকান থেকে বেরোচ্ছে, সেটা দোকানের মালিকরা জানতে পারলেন না?

    স্থানীয় সূত্রের খবর, হাড়োয়ার ফারুক এবং হাসনাবাদের আশিক ইকবাল গাজি ও আব্দুল সেলিম গাজি— ধৃত এই তিন জনই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। এমনকী, আশিক ইকবাল গাজি ও তাঁর পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হন তৃণমূলের টিকিটে। বিজেপির যুবমোর্চার বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, ‘তৃণমূল যে গুলি, বন্দুকের রাজনীতি করে, সেটা ফের প্রমাণ হয়ে গেল।’ পাল্টা তৃণমূলের বসিরহাট সংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান সরোজ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘ধৃতেরা এক সময়ে তৃণমূল করত। এখন দলের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)