হলদিয়ায় বিজেপি বিধায়ক ‘বনাম’ বিজেপি সাংসদের দ্বন্দ্ব। দুই শ্রমিক সংগঠনকে সামনে রেখে চাপানউতোর। কারও নাম না করেই এক দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। অন্যদিকে হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের মন্তব্য, ‘সাংসদ হলদিয়া সম্পর্কে এখনও অত কিছু জানেন না। নতুন এসেছেন।’ ঘটনার সূত্রপাত রবিবার হলদিয়ায় ভারতীয় মজদুর সংঘ বা বিএমএস-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাখা বক্তব্যকে ঘিরে।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক সংগঠন নিয়ে বিজেপির অন্দরে অনেক দিন ধরেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে। কারণ আক্ষরিক অর্থে বিজেপির কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। ভারতীয় মজদুর সংঘ বা বিএমএস (BMS) রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর। শিল্পাঞ্চলে তাদেরই বিজেপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে পুরোভাগে দেখা যায়। এ দিকে হলদিয়ায় ভারতীয় জনতা মজদুর সেল বা বিজেএমসি (BJMC) রয়েছে। এই সংগঠন আবার বিজেপির ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। বিজেএমসির একাধিক কর্মসূচিতে হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে দেখা যায়। আর এই দুই সংগঠন নিয়ে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে আকচাআকচির অভিযোগ নতুন নয়।
এরই মধ্যে রবিবার হলদিয়ায় ভারতীয় মজদুর সংঘের তরফ থেকে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে তিনি বলেন, ‘সব কিছুর দেখভাল করবে ভারতীয় মজদুর সংগঠন, বিএমএস। আপনারা অন্য কোনও সংগঠনের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। সেই সংগঠনে যিনিই থাকুন বা তিনি যে সংগঠনের নেতা বলে নিজেকে তুলে ধরুন, বিএমএসের কাছেই আসতে হবে। তারাই সবটা দেখবে। অনেকেই আছেন, যাঁরা ভারতীয় মজদুর সংগঠনকে ছোট করে নিজেদের তুলে ধরতে চান। তাদের ফাঁদে পা দেবেন না।’
পরে বিজেপি সাংসদ ওই সংগঠনের নাম করে অভিযোগ তোলেন, ‘এখানে এসে প্রতারণামূলক একটি সংগঠনের নাম শুনতে পাচ্ছি। তার নাম বিজেএমসি। দলীয় অনুশাসন অগ্রাহ্য করে আমাদের দলেরই কিছু কিছু লোকজন তা চালাচ্ছেন। হলদিয়ায় এসে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি। বিএমএসের উপর যাঁরা নির্ভর করেন, তাঁদের ভাঙিয়ে বিজেএমসিতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দলেরই লোকজন করছে। আমি বলেছি, তাঁদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।’
পাল্টা বিজেপির বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘প্রথমত বিজেপির কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। যে শ্রমিক সংগঠনের কর্মসূচি সেটা বিএমএস, ওটা অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠন। ওরাই তা বলে। আর যে কোনও শ্রমিকের অধিকার আছে, যে কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সাংসদ হলদিয়া সম্পর্কে এখনও অত কিছু জানেন না। নতুন এসেছেন। হলদিয়ার কালচার সম্পর্কেও জানেন না। আর ওনাকে হয়ত কেউ বোঝাচ্ছে। উনি তো সাংসদ হয়েছেন এখন, সব দিক ভাবনাচিন্তা করে ওনার বলা উচিত।’
একই সঙ্গে বিধায়ক জানান, তিনি শিল্পাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি। ফলে তাঁকে যে কোনও শ্রমিক সংগঠন ডাকলে, তিনি পরামর্শ দিতে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। কী ভাবে অভাব অভিযোগ মিটবে, শ্রমিকরা যাতে কোনও ভাবেই বঞ্চিত না হন, সেটা দেখাই তাঁর কাজ। রবিবার বিএমএসের কর্মসূচিতে ডাক পেলে সেখানেও যেতেন, বলে জানান।
অন্যদিকে বিধায়ক ঘনিষ্ঠ হিসাবে জেলায় পরিচিত বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি বলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের তো আর শ্রমিক সংগঠন হয় না। শ্রমিকরাই রেজিস্ট্রেশন করেন, সেই সংগঠন কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। এখানে তো রাজনৈতিক দলের অনুমোদনেরও প্রশ্ন নেই।