প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন নয়, পুলিশকে সাহায্য করাই কাল হয়েছিল হজরতের। দত্তপুকুরে কাটা মুণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় সামনে এল সত্যিটা। মৃত হজরত লস্কর পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করছিল বলে সন্দেহ করেছিল ‘গ্যাং’-এর অন্যান্য সদস্যরা। আর সেই কারণেই খুন করে কেটে নেওয়া হয় হজরতের মুণ্ড।
সম্প্রতি ভিন রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করে জলিল গাজিকে রিমান্ডে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। আর সে সময়েই প্রকাশ্যে আসে খুনের নেপথ্যকাহিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত হজরত লস্কর, ওবায়দুল গাজি এবং জলিল গাজি দল বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় চুরি, লুটপাট করত। কয়েকমাস আগে প্রায় ৪০০ গ্রাম চুরির সোনা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মৃত হজরত অন্যদের ঠকিয়েছিল বলে দাবি জলিলের। পাশাপাশি হজরতের অন্য শাগরেদরা অনেক সময়েই চুরি করে বাংলাদেশে গা ঢাকা দিত।
সম্প্রতি উত্তরপাড়ার একটি চুরির ঘটনায় এক সঙ্গীকে এ রাজ্যে ডেকে এনে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল হজরত। ওই ঘটনায় নিজের দলের লোকজনেরাই হজরতের বিরুদ্ধে চলে যায়। তাকে খুনের চক্রান্ত করে জলিল। বামানগাছির ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনা হয় হজরতকে। এরপর মদ্যপানের জন্য তাকে মালিয়াকুরে খেতের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে পেছন থেকে আঘাত করা হয়েছিল হজরতের মাথায় এবং তাকে অজ্ঞান করা হয়। এর পর ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় তার মাথা।
মুণ্ড কেটে আলাদা করে দেওয়া হয় যাতে কেউ না দেহটি শনাক্ত করতে না পারে। এখনও হজরতের কাটা মুণ্ড উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার বাজিতপুরে কৃষি জমির পাশের মাঠে একটি গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ওই দেহের হাতে থাকা উল্কির সূত্র ধরে পাওয়া গিয়েছিল মৃতের পরিচয়। জানা যায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর। হজরত লস্করও নিজেও দুষ্কৃতী ছিল। চুরি-ছিনতাই করত সে। সম্প্রতি পুলিশের সাহায্য নিয়ে মূলস্রোতে ফিরতে চাইছিল হজরত।
তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ ছিল, ত্রিকোণ প্রেমের পরিণতির কারণেই হয়তো এই ঘটনা। সোনাগাছির এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল হজরতের। কিন্তু পরে সেই তরুণী হজরতের মাসতুতো ভাই ওবাইদুল্লাহকে বিয়ে করে। আর সেই কারণেই হয়তো এই খুন বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। হজরতকে খুন করেছিল ওবাইদুল্লাহর বন্ধু জলিল, জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পরে জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই গোটা ঘটনার মোড় ঘোরে।