বেআইনি বন্দুক আছে, কিন্তু ভাল মানের গুলি দুষ্কৃতিরা কেনে এই দোকান থেকে
আজকাল | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিভাস ভট্টাচার্য: এক বা দুই বছর নয়। বেশ কয়েকবছর ধরেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে অস্ত্র ও গুলি পাচার হচ্ছিল। অস্ত্র পাচারের ঘটনায় তদন্তে নেমে এটাই প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হচ্ছে বলে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কলকাতার নামী একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বিপণন সংস্থার দুই কর্মী-সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এসটিএফ। সেইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি দোনলা বন্দুক-সহ ১৯০ রাউন্ড গুলি। যা 'অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি'তে তৈরি হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে ওই সংস্থার মালিককেও ডাকা হয়েছে বলে এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেন অপরাধীরা অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির গুলি কিনতেই উৎসাহী? এসটিএফ একটি সূত্র জানায়, বেআইনি অস্ত্র কারখানায় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা গেলেও ভালো মানের গুলি তৈরি করা যায় না। কারণ, গুলি তৈরির জন্য প্রয়োজন অনেক দামী যন্ত্রপাতি। আবার গুলি ছাড়া বন্দুক অচল। ফলে আগ্নেয়াস্ত্র বেআইনিভাবে জোগাড় করা গেলেও ভালো মানের গুলির জন্য অপরাধীদের তাকিয়ে থাকতে হয় লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই দোকানগুলির দিকে। যেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কলকাতার ওই অস্ত্র বিপণন সংস্থার দুই কর্মী জয়ন্ত ও পরে গ্রেপ্তার হওয়া শান্তনু দোকান থেকে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির গুলি কালোবাজারি করত।
স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠে আসে দোকান থেকে কীভাবে এই গুলি পাচার হত? ওই সূত্রটি জানায়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র খারাপ হলে তার মালিক দোকানে যখন সারাইয়ের জন্য নিয়ে আসতেন তখন সেই অস্ত্র সারানোর পর গুলি চালিয়ে পরীক্ষার করে দেখা হয়। সেইসময় যদি দূ'রাউন্ড কার্তুজ পরীক্ষা করে দেখা হত তবে কাগজে কলমে দেখানো হত হয়ত ১০ রাউন্ড। এই অতিরিক্ত গুলি হাত বদল হয়ে বাইরে পাচার হয়ে যেত। এটা আটকাতে গেলে নিয়মিত 'স্টক'-এর খাতাপত্র পরীক্ষা করাটা খুবই জরুরি।
গুলির পাশাপাশি পাচার হয়ে যেত বন্দুক বা পিস্তল। যে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ওই সূত্রটি জানায়, অনেকেই একটা সময় পর বন্দুক বা পিস্তল আর নিজের কাছে রাখতে চান না। যেই দোকান থেকে তাঁরা কিনেছেন সেই দোকানেই তাঁরা জমা দিয়ে 'রিসিপ্ট কপি' নিয়ে নেন। দীর্ঘদিন যদি আসল মালিক সেই অস্ত্র আর ফিরিয়ে না নেন তবে তা যোগসাজশের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে অপরাধীদের হাতে চলে যায়। এছাড়াও অনেক সময় এটাও দেখা যায় লাইসেন্স একজনের নামে হলেও আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে আরেকজনের হাতে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, আপাতত দোকানের দুই কর্মী ও তিন পাচারকারী-সহ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও চক্রে আরও অনেকেই জড়িয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের অনুমান।