দর্শকদের মনে অপরাধমূলক সিনেমা-সিরিজ়ের প্রভাব কতটা মারাত্মক, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। রিষড়ার খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের মন বিষিয়ে তুলেছিল সেরকমই একটি টেলি সিরিজ়? ‘ক্রাইম পেট্রল’ নামক টেলি সিরিজ় দেখে অপরাধ প্রবণতা তৈরি হয় সুজল সাউ (২১)-এর মনে? পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে সেরকমই তথ্য। ক্রোধের সামনে ঠুনকো হয়ে যায় বন্ধুত্ব। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বন্ধু অভিষেক পাসোয়ানকে ক্ষতবিক্ষত করতে হাতে কাঁপেনি সুজলের। ধৃত সুজলকে নিয়ে সোমবার এই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে গিয়ে উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত সেই অস্ত্রও।
ঘটনার তারিখ চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন অভিষেক। বাড়ির ঠিক কাছেই পিছন থেকে আক্রমণ করে সুজল। পিঠে একের পর এক ধারালো অস্ত্রের কোপ দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অভিষেক। ঘটনার দিন থেকেই পলাতক ছিল সুজল। গা ঢাকা দেওয়ার কৌশলও কি শিখে নিয়েছিল ওই টেলি সিরিজ় দেখে? এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে ওই টেলি সিরিজ় দেখত নিয়মিত। সেটা দেখেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল।’
পুলিশি জেরায় সুজল জানিয়েছে, ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখেই হত্যার ছক কষেছিল সে। প্রায় ২৮ দিন ধরে ফোনের টাওয়ার লোকেশন, সিসিটিভি ফুটেজ-এর উপর নির্ভর করে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বেশ কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ওই টেলি সিরিজ়-এ এটাও দেখানো হয়, শেষমেশ অপরাধী ধরা পড়বেই। বাস্তবেও অন্যথা হয়নি।
সোমবার দুপুরে সুজলকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। সুজলের দেখানো পথে গিয়েই স্থানীয় একটি পুকুরের ধার থেকে উদ্ধার হয় ভোজালি। গ্রেপ্তারির পর শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে অভিযুক্তকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে রোমহর্ষক খুনের ঘটনার বিভিন্ন তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। মৃত অভিষেকের দিদি সবিতা এ দিন বলেন, ‘আমার ভাই খুব ভালো ছিল। রেশন দোকানে কাজ করত, আবার কলেজে পড়ত। আমার একটাই ভাই ছিল। যে মেরেছে তার ফাঁসি চাই।’