গ্রামেরই এক বিধবা মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঝাড়গ্রামের যুবক। সেই সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে তাঁকে খুন করেছিল গ্রামেরই ৮ জন। সুরজ কোটাল নামের ওই যুবককে খুনের ঘটনায় ৮ জনকেই সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল ঝাড়গ্রামের জেলা ও দায়রা আদালত। সোমবার এই রায় দেন ঝাড়গ্রামের জেলা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রণবপল্লীর বাসিন্দা সুরজ রাজমিস্ত্রির সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। বছর ২৪-এর সুরজের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল গ্রামেরই এক বিধবা মহিলার সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি গ্রামেরই ৮ জন। এই সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে তারা সুরজকে নৃশংসভাবে খুন করে দেহ মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল।
আগে থেকেই সুরজকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই মতোই, ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে এলাকার কয়েকজন যুবক সুরজকে সঙ্গে নিয়ে মদ খেতে বসে। তার পর তারা সুরজকে লাঠি দিয়ে মারধর করে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। সুরজের খোঁজ না পেয়ে দু'দিন পরে ঝাড়গ্রাম থানায় একটি অভিযোগ করেন তাঁর বাবা শশধর কোটাল। তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই ঘটনায় পুলিশ প্রতিবেশী সঞ্জয় কোটালকে জেরা করে। জেরায় সুরজকে খুনের কথা স্বীকার করে সঞ্জয়। ঘটনার ১৪ দিন পর পাশ্ববর্তী ঢেঁকিপুড়ার জঙ্গলে কাজু গাছের নিচে মাটি খুঁড়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরজ কোটালের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে আর দু'জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। গত বছর ২৯ মার্চ চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। তার পর শুরু হয় বিচার পর্ব।
এই মামলার স্পেশাল সরকারি আইনজীবী কুণালকান্তি ঘোষ জানান, বিচার শুরু হওয়ার মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই বিচার শেষ হয়েছে। এই মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৬৪, ২০১ ধারায় আটজনেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তাঁর ছেলে প্রকৃত বিচার পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন শশধর কোটাল।
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানান, ঝাড়গ্রামে জেলা আদালত চালু হওয়ার পর এই প্রথম কোন মামলায় একসঙ্গে ৮ জনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।