নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: কয়েক মাস আগেও বাজারে টম্যাটো কিনতে গেলে হাত পুড়ত আম জনতার। ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে টম্যাটো। বর্তমানে বাজারে সেই টম্যাটোরই দর নেই। চাষিদের অভিযোগ, যত টাকা খরচ করে তাঁরা টম্যাটো উৎপাদন করছেন, পাইকারি দামে তা বিক্রি করে ফসলের দাম ওঠা তো দূরের কথা, হাটে নিয়ে যাওয়ার খরচটাও পাচ্ছেন না। কোথাও আড়াই টাকা, তিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা কেজি পাইকারি দরে টম্যাটো বিক্রি করছেন চাষিরা। অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতাও। ফলে হাটে নিয়ে এসে টম্যাটো ফেলে নষ্ট করে দিচ্ছেন চাষিরা। একই অবস্থা বাঁধাকপির ক্ষেত্রেও। এনিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ চাষিরা। দাবি উঠছে হিমঘরের।
সোমবার আড়ষার তিলাইট্যাঁড় এলাকায় জমি থেকে টম্যাটো তুলছিলেন বিকাশ হাঁসদা। কত করে দাম যাচ্ছে? জিজ্ঞাসা করতেই মুখ তুলে তাকালেন। বললেন, ‘তিন থেকে চার টাকা কেজি! এই দামে ফসল বিক্রি করে কি আর পোষায়? এই টম্যাটো জমি থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যেতে যে টাকা খরচ হয়, বিক্রি করেও তা ওঠে না।’ অনেক চাষি আবার টম্যাটো বিক্রি করতে আর বাজারেই যাচ্ছেন না। বলরামপুরের চাষি শক্তিপদ মাহাত বলছিলেন, ‘টম্যাটো তোলারই খরচ উঠবে না। তার উপর লাগবে গাড়ি ভাড়া। তাই বাজারে যাইনি। তার থেকে টোম্যাটো না হয় গোরু, ছাগলেই খাক।’
অনেকে জমিতেই গোরু-ছাগল ছেড়ে দিয়ে টম্যাটো নষ্ট করে দিচ্ছেন। একই অবস্থা বাঁধাকপির ক্ষেত্রেও। ১০টাকা জোড়া। তাও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে না! এমনই করুণ অবস্থা চাষিদের। চাষিদের বক্তব্য, আলু, পেঁয়াজের মতো কয়েকটি ফসলের জন্য তা থাকলেও সহজে পচে যায় এমন সব্জির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করেও ফসল বিক্রি করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার কথা লেখা থাকে। জেলার কৃষক সংগঠনগুলিরও নানান দাবি করে। কিন্তু বেশি ফলন হলেই চাষিরা ফসলের দাম পান না। এই পরিস্থিতির বদল হওয়া দরকার। প্রয়োজনের কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।
জেলার কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে আছে। জেলায় এইসব সব্জির জন্য একটা হিমঘরের অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কিছু সব্জি আছে যা বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। তাই কী ভাবে চাষিদের এই পরিস্থিতি থেকে বের করা যায় তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।-নিজস্ব চিত্র