• হত্যার টার্গেট কন্যাভ্রূণ, নজরে বহু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান
    বর্তমান | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: এক-দেড় বছরের মধ্যে বর্ধমান শহর লাগোয়া এলাকায় আট-দশটি মৃত ভ্রূণ উদ্ধার হয়েছে। সেগুলির অধিকাংশ ছিল কন্যাভ্রুণ। অনেকেরই অনুমান, কন্যাভ্রূণ হত্যার টার্গেট নিয়েই বর্ধমানে ‘অপারেশন ডি’ শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার তিন-চারটি ব্লকে কন্যাশিশুর জন্মানোর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তারপর এভাবে অপারেশন ডি চলতে থাকলে পরিণতি আরও খারাপ হবে। 


    এক আধিকারিক বলেন, ইউএসজি সেন্টারগুলির বাইরে ‘ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয় না’ বলে লেখা থাকে। বাস্তবে সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার। তা না হলে এত ভ্রূণ উদ্ধার হতো না। শনিবারও তেলিপুকুর থেকে তেজগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় একটি ভ্রূণ উদ্ধার হয়েছে। সেটির আনুমানিক বয়স তিন মাস। এর আগে নবাবহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় একই ধরনের ভ্রূণ উদ্ধার হয়েছে। সমাজে এখনও অনেকেই কন্যা জন্মানো অভিশাপ বলে মনে করে। তারা এধরনের অবৈধ কাজ করতে পারে।


    প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কয়েকটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নজরে রয়েছে। সেগুলিতে একশ্রেণির চিকিৎসক টাকার লোভে এধরনের অসমাজিক কাজ করছে। শহরে ভুয়ো ডাক্তারের রমরমাও রয়েছে। দু’মাস আগেও লক্ষ্মীপুর মাঠে পুলিস একটি ভুয়ো নার্সিংহোমের সন্ধান পায়। দু’জনকে সেখান থেকে পুলিস গ্রেপ্তারও করে। শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় ভুয়ো চিকিৎসকদের রমরমা রয়েছে। তারাও এধরনের কাজ করতে পারে। 


    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, হামেশাই বর্ধমানে ভ্রূণ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। কোথা থেকে সেগুলি আসছে, তা দেখা হবে। কোনও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এধরনের কাজ করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার মেয়েদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প এনেছে। তাদের পড়াশোনা থেকে বিয়ে সব কিছুর ভার সরকার নিচ্ছে। তারপরও যারা কন্যাভ্রূণ হত্যা করছে তারা মানসিকভাবে সুস্থ নয়। বিষয়টি বন্ধ করার জন্য আমরা অভিযানে নামব। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে একাধিক কন্যাভ্রূণ উদ্ধার হলেও সেগুলি কোথা থেকে আসছে, তা জানা যায়নি। অন্ধকারে ব্যাগে ভরে এনে রাস্তার পাশে ভ্রূণ ফেলা হচ্ছে। যেসব এলাকায় তা ফেলা হচ্ছে সেখানে সিসি ক্যামেরাও থাকছে না। স্থানীয়রাও প্রথমে বিষয়টি টের পাচ্ছেন না। তেলিপুকুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সম্প্রতি তেজগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় দু’টি ভ্রূণ উদ্ধার হল। একটি চক্র শহরে সক্রিয় রয়েছে। তারাই এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। কন্যাভ্রূণ বেশি হত্যা করা হচ্ছে। কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে চক্রটি আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। 


    জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, নবাবহাট, খোসবাগান এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপর নজর রাখা হচ্ছে। রোগী ভর্তির সময় রেজিস্টারে নাম নথিভুক্ত বাধ্যতামূলক। অ্যাবরেশন করার সময় অনেকেই এই নিয়ম মানছে না। কোনও সেন্টারে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হলে লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হবে। সেন্টারের মালিককেও গ্রেপ্তার করা হবে। যে বা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)