• মান্ধাতা আমলের বগি, ফলে প্রায়ই চাকা ভেঙে লাইনচ্যুত হচ্ছে মালগাড়ি
    বর্তমান | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মান্ধাতা আমলের বগিতেই চলছে মালগাড়ি। তেমনি আবহমান কাল ধরে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে চলছে রেল লা‌ইন সংস্কারের কাজ। রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকতার অভাবে বার বার চাকা ভেঙে, কখনও লাইনচ্যুতির ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ হুঁশ নেই রেলের। রবিবার রাতেও রামপুরহাটে মালগাড়ির চাকা ভেঙে বিপত্তি ঘটে। রাতভর কাজের পর সোমবার ভোরে মালগাড়িটিকে লাইনে তোলা হয়। মাস খানেক আগেও তারাপীঠ রোড স্টেশনের কাছে চলন্ত মালগাড়ির চাকা ভেঙে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। 


    রেলওয়ের উন্নয়নে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোনও শেষ নেই। প্রায়ই নিত্যনতুন ট্রেন চালু করা হচ্ছে। কিন্তু আধুনিকতার অভাবে রেললাইনের নিরাপত্তা তদারকি তলানিতে ঠেকেছে। ইদানীং প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, মালগাড়ি বা যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৮ জানুয়ারি তারাপীঠ রোড স্টেশনের কাছে কয়লা বোঝাই চলন্ত মালগাড়ির চাকা ভেঙে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। যার জেরে আপ লাইনে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে প্রথম সারির হাওড়া নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সহ বহু দূরপাল্লার ট্রেন। চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের। প্রায় এক ঘণ্টা পর অন্য লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই ঘটনার এক মাস যেতে না যেতেই এবার রামপুরহাট স্টেশন সংলগ্ন ২৩ নম্বর রেলগেটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মালগাড়ি স্লিপার ফ্যাক্টরি ঢোকার মুখে চাকা ভেঙে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত না হলেও একের পর এক মালগাড়ির চাকা ভাঙা ঘটনায় বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মালগাড়িটির গতিবেগ বেশি থাকলে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। ওই সময় ডাউন লাইনে একাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। রাতভর কাজের পর এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ মালগাড়িটিকে লাইনে তোলা হয়। রামপুরহাটের স্টেশন ম্যানেজার হাদিউজ্জামান বলেন, বগি বা লাইনের ত্রুটি ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে রেল কর্মীরা বলেন, মান্ধাতা আমলের বগি দিয়ে মালগাড়িগুলি চালানোর ফলে বার বার চাকা ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটছে। হাজার হাজার কিমি রেল লাইন। অন্য জায়গায় বিশেষ ট্যাম্পিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের ভরসা শুধুই হাতুড়ি-শাবল। হেঁটে ট্র্যাক (লাইন) দেখতে হয়। ফলে উনিশ-বিশ হলেই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।


    যদিও এব্যাপারে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, এত ফাস্ট অপারেশন। যেকোনও জায়গায় মেকানিক্যাল সমস্যা হতেই পারে। চিরকাল হাতুড়ি, শাবল দিয়েই তো লাইন সংস্কার হয়ে এসেছে। তাতে কিন্তু অসুবিধে কিছু হয়নি। ট্যাম্পিং মেশিন তো নতুন। যেখানে ট্যাম্পিং মেশিন নেই, সেখানে হাতুড়ি, শাবল দিয়েই কাজ হবে। তার সঙ্গে চাকা ভেঙে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ভারতীয় রেলে দুর্ঘটনার রেট বরং কম। এই ধরনের ঘটনা খুব কমই ঘটে। 
  • Link to this news (বর্তমান)