নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: একই নাম, একটাই আবেদন। অথচ ভোটার কার্ড এল দু’টো। তাও আবার ভিন্ন ভিন্ন নম্বরের! এমনই ঘটনা ঘটেছে শান্তিপুর শহরের এক বাসিন্দার সঙ্গে। বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে যখন নদীয়া জেলায় অনুপ্রবেশের আতঙ্ক, ভারতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া নিয়ে প্রশাসনের সতর্ক থাকা উচিত; সেসময় এটাকে গুরুতর ভুল হিসেবেই দেখছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে অবশ্য প্রশাসনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না।
নদীয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, এরকম হওয়ার কথা নয়। কীভাবে হল, তা অবশ্যই জানা দরকার। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
শান্তিপুর শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতলপাড়া লেনের বাসিন্দা পিনাকী প্রামাণিক নিজের ছেলে প্রিয়মের ভোটার কার্ড তৈরির জন্য আবেদন করেছিলেন। একাধিকবার নয়, পুরসভায় ভোটার কার্ড তৈরির নির্দিষ্ট ‘উইন্ডো’তে মাত্র একবারই আবেদন করেছিলেন তিনি। তিনদিন পর তাঁর কাছে পরপর দু’টি ভোটার কার্ড পৌঁছে যায়। কার্ড দু’টি পরখ করেই পিনাকীবাবুর চক্ষু চড়কগাছ। তিনি দেখেন, তাঁর ছেলের একটি আবেদন থেকেই ভিন্ন ভিন্ন নম্বরের দু’টি ভোটার কার্ড দেওয়া উঠেছে। অর্থাৎ একটি আবেদন থেকেই দু’বার প্রিয়মের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে।
পিনাকীবাবু বলেন, কীভাবে এমন হল বুঝতে পারছি না। আমি একটি আবেদনই করেছিলাম। আমাদের শান্তিপুর বিধানসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতলপাড়ার ভোটার লিস্টে ছেলের নাম তোলার জন্য এই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আমি তিনদিন আগে কার্ড দু’টো হাতে পাই। তখন দেখি, ছেলের নাম একই ভোটার লিস্টে দু’বার উঠেছে। আমি একটি এপিক কার্ড সারেন্ডার করতে চাইছি। কিন্তু চারদিকে যা চলছে, তাতে এরকম ভুল হওয়া মোটেও ঠিক নয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এরকম ভুল হলে অনুপ্রবেশকারীরা তো নিশ্চিন্তে ভোটার কার্ড করে নেবে।
প্রতিবেশী বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্ত। প্রায় প্রতিদিনই পুলিস ও বিএসএফের অভিযানে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার হচ্ছে। আচমকা ভারতে অনুপ্রবেশের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিসও ভ্রু কোঁচকাচ্ছে। কারণ শুধু অনুপ্রবেশ নয়, দালাল ধরে প্রশাসনের ভিতরে ‘ঘুঘুর বাসা’কে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশিরা ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিচ্ছে। এনিয়ে মোটা টাকার কারবার চলছে। শান্তিপুরের এই ঘটনা সেই উদ্বেগের আগুনে যেন ঘি ঢালার কাজ করল। কারণ, একজন সাধারণ মানুষের একটি আবেদনেই যদি এমন ভয়ঙ্কর ভুল হতে পারে, তাহলে অনুপ্রবেশকারীদের কাছে ভোটার কার্ড পাওয়া কী এমন কঠিন কাজ?
বিজেপির নদীয়া দক্ষিণ বিজেপি সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, ভোটার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার একটি চক্র চলছে। বাংলাদেশিরা বেআইনিভাবে এদেশে এসে তা পেয়ে যাচ্ছে। এই চক্র অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। কেন্দ্র-রাজ্য দায় ঠেলাঠেলি না করে যৌথভাবে এই কাজে হাত লাগাতে হবে। একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এমন হলে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে ভোটার কার্ড পৌঁছে যাওয়া খুব সহজ। এতে দেশের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।