• কান্দিতে অন্যের জমি লিজ নিয়ে এঁটেল মাটিতে তরমুজ চাষ করে ভালো আয়    
    বর্তমান | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কান্দি: নিজের জমি বলতে তেমন কিছু নেই। তবে ব্যবসায়িক সূত্রে ভিন রাজ্য থেকে তরমুজ চাষ রপ্ত করেছিলেন। গ্রামে ফিরে অপরের জমি লিজ নিয়ে এঁটেল মাটিতেই তরমুজ চাষ করে শুধু যে ফসল ফলিয়েছেন তাই নয়, এক বছরে সাত লক্ষ টাকা আয় করে নজরে এসেছেন। কান্দি থানার চৈতন্যপুর গ্রামের ওই চাষি সাহিরুলকে খোদ রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পুরস্কৃত করলেন। বছর ৪০-এর সাহিরুল শেখ ১৯৯৭ সাল থেকেই ফলের ব্যবসা করছেন। তবে ২০০৫ সাল নাগাদ প্রথম নাসিক থেকে তরমুজ আমদানি করে এলাকায় বিক্রি করেন। এরপর আর থেমে থাকেননি। নাসিকের পর বেঙ্গালুরু, ওড়িশা, শোলাপুর থেকে বহুবছর ধরে তরমুজ আমদানি করে নিজের এলাকায় বিক্রি করছেন। তবে তিনি যে শুধু আমদানি করেই থেমে থেকেছেন তা নয়, গত এক দশক ধরে সেখানকার তরমুজ চাষিদের কাছ থেকে রীতিমতো চাষও রপ্ত করেছেন। এরপর গতবছর প্রথম নিজের গ্রামের মাঠে তরমুজ চাষ করতে নামেন। কিন্তু নিজের জমি বলতে তেমন নেই। নিজের চার বিঘে জমি ছাড়াও আরও নয় বিঘে জমি অপরের কাছে লিজ নিয়ে প্রথম চাষ শুরু করেন।


    প্রসঙ্গত, ডিসেম্বর মাসে তরমুজ চাষ শুরু হয়। গাছে ফুল ও ঝুরি আসে বপনের ৪৫ দিনের মাথায়। এর ১৫ দিনের মাথাতেই ফল ধরতে শুরু করে। ভালো ফসল হলে এক বিঘে জমিতে পাঁচ কুইন্টাল পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। গতবছর তিনি ওই ১৩ বিঘে জমিতে চাষ করে সাত লক্ষ টাকা লাভ করেছিলেন। তাই এবছর ১৩-র জায়গায় ৩০ বিঘে জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করছেন। এরমধ্যে ২৬ বিঘে জমি অন্য চাষিদের কাছে লিজে নেওয়া। লিজের জন্য চাষিদের বিঘা প্রতি তিন মণ করে ধানের দাম দেওয়া হয়।


    হাসিরুল বলেন, চাষ শুরুর আগে চিন্তায় ছিলাম। প্রচলিত ধারণা, তরমুজ হয় বালি মাটিতে। কিন্তু আমাদের এই এলাকায় জমিগুলি হল সাদা এঁটেল মাটির। নাসিকের চাষিদের কাছে থেকে জানতে পারি, সঠিক পরিচর্যা হলে এঁটেল মাটিতেও তরমুজ চাষ করা যাবে। সাহস করে এগিয়ে যেতেই সাফল্য পেয়েছি। এই চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ঠিকমতো সেচ ও ওষুধ প্রয়োগ।


    এদিকে রবিবার রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না কান্দিতে একটি কর্মসূচিতে এসেছিলেন। তিনি আয়োজকদের কাছে সাহিরুলের বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে ডেকে পাঠান। এরপর কর্মসূচি মঞ্চেই সাহিরুলের হাতে মন্ত্রী পুরস্কার তুলে দেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেন, বাংলার প্রকৃত চাষি হিসেবে তুমি এটা করে দেখিয়েছ।


    সাহিরুলের স্ত্রী হানিফা বিবি জানান, গত বছর চাষ করে খুব আতঙ্কে ছিলাম। চাষের জন্য আমার গয়নাও বন্ধক রাখতে হয়েছিল। তবে কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মধ্যক্ষ সবসময় আমাদের সাহস দিয়ে গিয়েছেন। সেই সাহসে ভর করেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কৃষি কর্মধাক্ষ্য গৌরব চট্টোপাধ্যায় বলেন, চাষিদের উৎসাহ দেওয়াই তো আমার প্রথম কাজ, সেটাই করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)