বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের জবাবি ভাষণ দিতে মঙ্গলবার বিধানসভায় উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণ রাখতে উঠে বিরোধীদের নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ মানে হেট স্পিচ দেওয়া নয়। এরা রোজ বলে। প্রতিদিন বক্তব্য রাখে। তবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিছু অসংযত, অসংলগ্ন কথা বলে।’
আর কী কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী, রইল আপডেট আকারে:
* বিজেপি কুৎসা করছে। অপপ্রচার করছে। আমি যখন কাগজ ছুড়ে ছিলাম তখন আমি একা ছিলাম। কথা বলতে দিত না। ভাষণ দিতে দেওয়া হত না। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলি: মমতা
* বলা হচ্ছে আমি টেবিল চেয়ার ছুড়েছি। আপনারা কত জন আছেন সংখ্যায়। আমি যখন কাগজ ছিঁড়েছিলাম, আমি একা ছিলাম। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম একসঙ্গে আমাকে একটা কথা বলতে দিত না। একটা প্রশ্নোত্তরে অংশ নিতে দিত না। আমি শান্তিপূর্ণ ভাবে এসেছিলাম। সবার কাছে ছবি আছে। আমি একটা টেবিল, চেয়ারে হাত দিইনি: মমতা
* এই হাউজ় ভাগ করে দেওয়া? এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এসেছেন। মানুষ তাঁদের ভোটে জিতিয়েছে। অথচ আপনারা একটা ধর্মকে বিক্রি করছেন? আমরা কিন্তু সর্বধর্মকে সম্মান করি: মমতা
* বলছে আমি নাকি টেবিল চেয়ার ছুঁড়েছি। স্পিকারকে বলব, আমাকে প্রমাণ দিতে হবে। লক্ষ্মণের গণ্ডী এ ভাবে ভাঙতে চাইলে, জবাব তো আমার দেওয়ার অধিকার আছে: মমতা
বাইরে ভিডিয়ো বললেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন, বলে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কবে থেকে উনি হিন্দু ধর্মের নেতা হলেন? হিন্দু ধর্মের স্রষ্টা রামকৃষ্ণ, বেদ, বেদান্ত। মানব জাতিকে অমৃতের পুত্র বলে সম্বোধন করেছিলেন। সেই হিন্দু ধর্ম কি এই হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা? আমি কখনও আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলি না। আমার কবিতা আছে, পদবীটা না থাকলে ভালো হতো। যিনি হিন্দু ধর্মের কথা বলছেন, আমি কিন্তু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে : মমতা
* আপনাকে আজকে বলছি। আমার বাবা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে চণ্ডীপাঠ শিখেছি। তাঁকে সকলে এলাকায় পণ্ডিতবাবু বলে চিনতেন। খুব কম বয়সে হারিয়েছি। কিন্তু তার মধ্যেই যে শিক্ষা পেয়েছি, তা সকলকে ভালোবাসার শিক্ষা: মমতা
*হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমাকে যাঁরা ব্যঙ্গ করছেন, বলতে চাই, যেখানে আমি থাকি, সেই বাড়ির দেওয়ালে শিবমন্দির আছে। তাই কারও কিছু করার ক্ষমতা আমাকে নেই: মমতা
* বলছে সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না বাংলায়। সব স্কুল, কলেজ, ক্লাব, বাড়িতে পুজো হয়েছে। একটা জায়গার একটা ঘটনা নিয়ে আমাকে কলঙ্কিত করলেন, বাংলাকে কলঙ্কিত করলেন, হিন্দু ধর্মকে কলঙ্কিত করলেন: মমতা
* আমি যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজে পড়তাম। কী হয়েছে আমি অন রেকর্ড বলতে চাই। ওখানে একটা নির্মাণের কাজ হচ্ছিল, এক জায়গায় অনেক জিনিস পড়েছিল। ওরা বলেছিল, গেটের সামনে না করে তোমরা একটু সরিয়ে নাও। তার পর তো কোর্টেও যায়। কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুটো পুজোই হয়েছে। যোগেশ চৌধুরী, যোগেশ চৌধুরী ল কলেজেও হয়েছে: মমতা
দুই কলেজের পুজোর ছবি তুলে ধরে মমতা বলেন, আমি এভিডেন্স দিয়ে প্রমাণ করে দিলাম। আমি এটা রেকর্ড করতে চায়।
* আগে দিল্লির নেতারা এসে বলতেন, আমি সরস্বতী পুজো, দুর্গাপুজো করতে দিই না। আমাকে এই জীবনে এসেও শুনতে হবে, জম্মু কাশ্মীরের টেরোরিস্টদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক? স্পিকার স্যার, বাংলার মানুষকে বলব, যদি প্রমাণ করতে পারেন, এক দিনে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। তবে বিরোধী দলনেতা যে অভিযোগ এনেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানাব : মমতা
আমরা আছি বলেই বাংলাদেশে এই ঘটনা ঘটার পর বাংলা শান্ত। এটা সর্বধর্ম, সর্ববর্ণের মানুষের দান। আপনারা (বিজেপি) তো বাংলায় বর্ডারে গিয়ে উস্কেছিলেন। বাংলা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য: মমতা
* অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গ নিয়েও এ দিন মমতা বলেন, ‘যারা এলো তাদের শিকল বেঁধে আনা হল কেন? প্রধানমন্ত্রী আপনি প্রতিবাদ করেছেন? আপনি বলতে পারতেন, আমাদের ফ্লাইটে ফেরাব। সেই দায়িত্ব নেননি। আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু এখন বাধ্য করছেন বলতে।’
* গঙ্গাসাগর মেলায় এক পয়সা দেন না। যা রোজগার হয়, উত্তরপ্রদেশে নিয়ে চলে যান। জলে পারাপার করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কত বার বলেছি একটা গঙ্গাসাগর সেতু করে দিতে। বলতে বলতে আমার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। কোথায় বিরোধী দলের নেতা, হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক। একবারও কেন্দ্রকে বলেছেন, গঙ্গাসাগর সেতু করা উচিত, গঙ্গাসাগরের স্বার্থে? আমরা করছি: মমতা
* জগন্নাথ ধাম হচ্ছে বলে বাবুর খুব রাগ হচ্ছে। কচুরিপানা মেখে সেজেগুজে বসে থাকুন। বলছে জগন্নাথ ধাম করতে দেবে না। বুকের পাটা থাকলে আটকাক। আমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম: মমতা
* মুসলিম লিগ বলে কথায় কথায়। বাংলায় ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু থাকেন। তাঁরা খাওয়া পড়া শিক্ষা পাবেন না? আমি যদি বলি আমার পাঁচ আঙুলে হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পারসিক-মুসলমান-খ্রিস্টানি, সেটা অন্যায়?: মমতা
* মহাকুম্ভ এখন মৃত্যুকুম্ভ। মৃত্যু কূপের মতো। মহাকুম্ভকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু পরিকল্পনা না করে হাইপ তুলে এত লোকের মৃত্যু? বলছে ৩০ জন। কথাটা সঠিক? কত ডেডবডি ভাসিয়েছেন নদীতে? হাজার হাজার। আট বার আগুন লেগেছে। বড়লোক, ভিআইপিদের আলাদা ব্যবস্থা। গরিবদের আলাদা: মমতা
* একটা বড় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য প্ল্যানিং করতে হবে। মহাকুম্ভ শুরু হওয়ার দিন পর্যন্ত কোনও প্ল্যানিং হয়নি। এখনও দেখছি আসানসোলে লোক এনে ভরছেন। ফ্রিতে ট্রেন দিচ্ছে, বলছে সব করে দেবে। কত লোক একটা ট্রেনে যেতে পারে? : মমতা
* একটা বড় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য প্ল্যানিং করতে হবে। মহাকুম্ভ শুরু হওয়ার দিন পর্যন্ত কোনও প্ল্যানিং হয়নি। এখনও দেখছি আসানসোলে লোক এনে ভরছেন। ফ্রিতে ট্রেন দিচ্ছে, বলছে সব করে দেবে। কত লোক একটা ট্রেনে যেতে পারে? রেল স্টেশনে স্ট্যাম্পেডেও অনেকে মারা গিয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। তবে আমরা নরম ভাবে বলেছি। কারণ দুর্ঘটনা যে কোনও জায়গায় হতে পারে, তা নিয়ে আমরা নোংরা রাজনীতি করি না।
এই তো লেদার হাবে তিন জন মারা গেলেন। কেএমডিএর শ্রমিক তাঁরা। লেদার হাবে মিটিং করে সিরিয়াস অ্যাকশন নিতে বলা হয়েছে। আপনারা কমিটি পাঠাচ্ছেন। অথচ মহাকুম্ভে কটা কমিশন গেল? আমার রাজ্যে যারা ফিরেছে, ডেথ সার্টিফিকেট দেননি, পোস্টমর্টেম হয়নি। মেডিক্যাল কলেজ থেকে সই পর্যন্ত করেনি। দেহ যাকে হ্যান্ডওভার করেছে, তাকে সই করিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য পোস্টমর্টেম করিয়েছি। এর পর তো বলবেন হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে তো ক্ষতিপূরণও পাবেন না : মমতা
* আরজি করের মেয়েটির মৃত্যুদণ্ড চাই না বলেছে। কী চাও? আমরা অপরাজিত বিল করেছি। কিন্তু ওরা বিল ফেলে রেখে দিয়েছে। ওরা আবার আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।: মমতা
* আমিও গর্ব বোধ করি হিন্দু ধর্মের বলে। তবে সর্বধর্মের বলেও গর্ব বোধ করি। বাড়িতে পুজো হয় আমার। আপনারা ধর্মকে বিক্রি করেন। দেশকে ভাগ করেন: মমতা
* ওরা বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করতে চায়। বাংলার মাটিতে যারা ছোট করতে চায়, আমি বলব, দয়া করে নিজেদের আর খাটো করবেন না। দরকার হলে জীবন দেবো। বাংলাকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করব। এটাই আমার শপথ: মমতা