এই সময়, মেদিনীপুর: আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা, দরিদ্র মানুষের বসবাস হওয়ায় এই ব্লকে প্রতিবছর যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে—এমনই বলছে পরিসংখ্যান। এ বার যক্ষ্মামুক্ত ব্লক গড়তে একগুচ্ছ পরিকল্পনা করল গড়বেতা ২ ব্লক প্রশাসন। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি যক্ষ্মা আক্রান্তদের নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হবে। বাড়ি বাড়ি পুষ্টিকর খাবারও পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ব্লক প্রশাসন।
গড়বেতা ২ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মূহূর্তে গড়বেতা-২ ব্লকে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো। তাঁদের পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে হবে। গড়বেতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন, ‘আমাদের ব্লকে আদিবাসী জনজাতির বাস বেশি। তাঁরা বেশির ভাগ শ্রমিক। সচেতনতা ও পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার কারণে প্রতিবছর একাধিক যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত হয়। চিকিৎসা চলে। আমাদের ব্লককে যক্ষ্মামুক্ত করতেই হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। টানা ৬ মাস নিয়মিত ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সেরে যায়। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলায় ২৪টি টিবি ইউনিটে প্রায় ৩০০০ যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা চলছে। জেলার প্রায় এক হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে যক্ষ্মা রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া ‘নিক্ষয়মিত্র প্রকল্পে’ প্রায় ১২০০ দরিদ্র রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।
জেলার যক্ষ্মা বিভাগের নোডাল অফিসার অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার হাজার পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়। চিহ্নিত করে তাঁদের নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এই মূহূর্তে জেলায় ২,৫৯৯ জন যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা চলাকালীন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য মাসে এক হাজার টাকা রোগীর অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়।’
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সড়ঙ্গী বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। দাঁড়িয়ে থেকে ওষুধ খাওয়ানো, পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কাজ করা হয়। জেলায় প্রায় প্রতিদিন ৩ হাজার জনের টেস্ট করা হয়। যক্ষ্মা রোগীরা ছয় মাস নিয়মিত ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে যক্ষ্মা রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়।’ এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
জেলায় ঝুকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ৭ লক্ষ জনগনের টেস্ট করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ২৫ হাজার জনের কফ পরীক্ষা, দেড় হাজার জনের বুকের এক্স-রে করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে জেলার ৩৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছে।