ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রথমে সাসপেনশন, তারপর স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস। বিধানসভায় উসকানিমূলক মন্তব্য এবং সংবাদমাধ্যমে মিথ্যাচারের অভিযোগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এবার স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আর তাতে আরও ক্ষুব্ধ শুভেন্দু-সহ বিরোধী দল। মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে সিঁড়িতে বসে বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রারা। নেতৃত্বে ছিলেন সোমবার সাসপেন্ড হওয়া চার বিধায়ক। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, হিন্দুদের হয়ে বিধানসভায় বলার জন্য তাঁকে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রতিবাদে আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি ভাষণ বয়কট করেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সময় বিধানসভার বাইরে তাঁরা ধরনায় বসবেন বলে কর্মসূচি স্থির করেছেন বিধায়করা।
সোমবার অধিবেশন চলাকালীন স্পিকারের দিকে কাগজ ছোড়ার মতো অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই এবার তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দেওয়া হল। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে ‘মুসলিমদের সরকার’ বলে কটাক্ষ করায় মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হল বলে মনে করছে শাসকদল। এছাড়া সাসপেনশনের কারণ হিসেবে শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমে যা বলছেন, তা মিথ্যা। এই দুই অভিযোগে মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনের শুরুতে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা হয়। তা পাঠ করে শোনান রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সমর্থন জানান অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমাররা। পরিষদীয় মন্ত্রীর কথায়, “ন্যক্কারজনক ব্যবহার করেছেন উনি। এটা জাতির লজ্জা। গণতন্ত্রের লজ্জা। তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আশা করি, সারা দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ ধিক্কার জানাবে।”
মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, “সোমবার বিধানসভা অধিবেশন কক্ষে কাগজ ছোড়া, অধ্যক্ষের দিকে তেড়ে যাওয়ার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল বিরোধী দলনেতাকে। অথচ সাংবাদিকদের শুভেন্দু বলেছেন, হিন্দুদের জন্য বলতে গিয়ে সাসপেন্ড হয়েছি। এমন মিথ্যাচারেরর জন্য ওঁকে ধিক্কার।” আজ সাসপেনশনের প্রতিবাদে বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসে শুভেন্দু স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস বলেন, “এই নিয়ে পাঁচবার আমাকে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস পাঠানো হল। শাসকের এই ভয় আমার ভালো লাগছে। তবে নোটিস পাঠিয়ে মুখ বন্ধ করা যাবে না।”
বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”বিধানসভা দুর্বল নয়, বিরোধী দলনেতাকে এই বার্তা পৌঁছে দিন। আমি অত্যন্ত মর্মাহত ওঁর বক্তব্য নিয়ে। আমাদের বিরোধী দলের সদস্যরা জানুন, বিধানসভা আসল। সমালোচনা করার হলে এখানে এসে করুন। ফ্লোর হল বিরোধীদের। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এই ব্যাপারে অত্যন্ত পরিষ্কার। এই প্ররোচনায় পা দিয়ে বাংলার মানুষ যে শান্ত আছে এতেই আমি আশ্বস্ত হচ্ছি। উনি যেভাবে প্ররোচনা দিচ্ছেন তাতে অশান্ত হতে পারে। ওঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।” বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে আনা স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিসটি সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী অধিবেশনের আগেই তাদের এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।