এই সময়: ২০০৪ সালে দিনের পর দিন বলতে না দেওয়ার কারণেই লোকসভায় কাগজ ছিঁড়ে দিয়েছিলেন বলে রাজ্য বিধানসভায় ব্যাখ্যা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে বিধানসভাতে যে ভাঙচুর হয়েছিল, সে দিন তিনি একটি চেয়ার–টেবিলেও হাত দেননি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে কাগজ ছোড়ার অভিযোগে শুভেন্দু অধিকারীকে সোমবার বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এরপর রাতেই বিরোধী দলনেতা এক্সে মমতার দুটি পুরোনো ভিডিয়ো পোস্ট করেন। এরমধ্যে একটি ২০০৪ সালের অগস্ট মাসের লোকসভার। অন্য ভিডিয়োটি ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের। শুভেন্দু অভিযোগ করেন, প্রথম ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তৎকালীন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের দিকে কাগজ ছুড়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ভিডিয়ো নিয়ে শুভেন্দুর অভিযোগ, মমতার ইন্ধনেই বিধানসভায় ভাঙচুর হয়েছিল।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে মঙ্গলবার জবাবি বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই জোড়া অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন। যদিও শুভেন্দু সহ বিরোধী দলের কেউ সে সময়ে সভায় উপস্থিত ছিলেন না।
২০০৪ সালে লোকসভায় কাগজ ছেঁড়ার ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, ‘বিধানসভায় আপনারা (বিজেপি) অনেকে রয়েছেন। আমি যখন (সংসদে) কাগজ ছিঁড়েছিলাম তখন ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েও একা ছিলাম। সাত দিন ধরে নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও একটাও কথা বলতে দিচ্ছিল না বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম। প্রশ্নোত্তরে অংশ নিতে দিত না। স্পেশাল মেনশন, কলিং অ্যাটেনশন করতে দেওয়া হতো না।’ এ সব কারণেই সে দিন তিনি ক্ষোভে কাগজ ছিঁড়ে দিয়েছিলেন বলে বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জায়গায় বিধানসভায় শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন বিজেপি যথেষ্ট বলার সুযোগ পায় বলেও মমতার দাবি। মমতার কথায়, ‘এঁরা তো রোজ (বিধানসভায়) বলেন। আমি নিজে তো কত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বিরোধীপক্ষকে এখানে ৫০ শতাংশ সময় বরাদ্দ করা হয়।’
সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূল নেত্রী ইন্ধন দিয়েছিলেন বলে শুভেন্দু অভিযোগ করায় তা–ও খন্ডন করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমি নাকি টেবিল চেয়ার ছুড়েছি বলা হচ্ছে। স্পিকারকে বলব, এর প্রমাণ দিতে হবে। আমাকে সিঙ্গুরে যখন ঢুকতে দেয়নি তখন সিঙ্গুর থেকে ফিরে এসে তদানীন্তন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে গেটে আটকায়। বলে, ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমি বলি, বিরোধী দলনেতাকে খবর দিন। তা সত্ত্বেও আমাকে মারা হলো।’ এই ঘটনার পরে তৃণমূলের তৎকালীন পরিষদীয় দল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল বলে মমতার বক্তব্য।
তাঁর কথায়,‘প্রত্যেক টিভি চ্যানেলের কাছে ছবি আছে। আমি সংবিধান দেখিয়ে কথা বলেছিলাম। আমি একটি টেবিলেও হাত দিইনি। একটা চেয়ারেও যদি হাত দিয়ে থাকি দেখান। সে দিন বিস্ফোরক হয়েছিল আমাদের দল। কারণ, তৃণমূলের চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমি তখন সাংসদ ছিলাম।’ বিধানসভা ভাঙচুরের এই ঘটনায় তৃণমূল বিধায়করা শাস্তির মুখে পড়েছিল বলে মমতার বক্তব্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সে দিন আমাদের বিধায়কদের সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তাঁদের মাইনে কাটা হয়েছিল।’
মমতার বিধানসভা ভাঙচুরের মন্তব্য নিয়ে শুভেন্দু এদিন পাল্টা বলেন, ‘উনি একা ভালো। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় খারাপ। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খারাপ। অর্জুন সিং খারাপ। আমিও তো ছিলাম। কিন্তু ভাঙচুরের অভ্যাস আমার নেই। তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম।