এই সময়: প্রায় দু’বছর হয়ে গেল রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। গানটির একটি স্তবকে ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন...’ শব্দগুলিকে বদল করে ‘বাংলার প্রাণ, বাংলার মন...’ করে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। এ বার মুখ্যসচিবের অফিস থেকে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হলো, রবি ঠাকুরের মূল গানটিই রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হবে। সঙ্গে জানানো হয়েছে কত সময়ে ওই স্তবকটি গাইতে হবে।
রাজ্য সরকার ২০২৩ সালে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে জোড়া সিদ্ধান্ত নেয়, পয়লা বৈশাখ দিনটি ‘রাজ্য দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি হবে বাংলার ‘রাজ্য সঙ্গীত’। বিধানসভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে এই গান যখন বাজানো হয়েছিল, তাতে ‘বাংলার প্রাণ বাংলার মন...’ ছিল। তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানের শব্দ বদল অনেকেই ভালো ভাবে নেননি। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া গানে কোনও বদল হবে না। শব্দগুলি অবিকৃতই থাকবে। নতুন নির্দেশিকায় সেই ‘বাংলা’ শব্দটি বদলে ফের ‘বাঙালি’ করা হলো। সরকারি ভাবে কোনও ব্যখ্যা দেওয়া না হলেও শাসক দলের নেতাদের বক্তব্য ছিল, বাংলায় বাঙালি বাদ দিয়েও অন্য প্রদেশের লোকজন থাকেন। তাঁরা বাঙালি না-হলেও বাংলার মানুষ। সে কারণেই ‘বাংলার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
নির্দেশিকায় মুখ্যসচিব ‘বাধ্যতামূলক’ ভাবে কিছু না বললেও উল্লেখ করেছেন, জাতীয় সঙ্গীত বা রাজ্য সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময়ে সকলে উঠে দাঁড়ালে ভালো হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময়ে উঠে দাঁড়ানো কিংবা না-দাঁড়ানো নিয়ে দেশজুড়ে ২০১৬ সালে কম বিতর্ক হয়নি। সে বছর সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশে বলা হয়েছিল, প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো বাধ্যতামূলক। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, তিন ঘণ্টার সিনেমা দেখতে যাঁরা যাবেন, তাঁরা ৫২ সেকেন্ড জাতীয় সঙ্গীত দাঁড়িয়ে শুনতে পারবেন না কেন? কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময়ে উঠে না-দাঁড়ানো অবমাননা কি না, সে প্রসঙ্গে আইনে কিছু বলা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের ২০১৬ সালের ওই নির্দেশ ২০১৮ সালে খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালতেরই বৃহত্তর বেঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের নির্দেশিকাতেও তাই রাজ্য সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময়ে উঠে দাঁড়ানো ‘বাধ্যতামূলক’ বলা হয়নি।