হাসিনার ‘আয়নাঘরে’ ইউনুসের ছায়াসঙ্গী খাগড়াগড়ের মূল চক্রী
বর্তমান | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার ‘বিতাড়ন পর্বে’ আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের জেল ভেঙে বের করে এনেছে শতাধিক কট্টর জঙ্গিকে। ক্ষমতায় এসে সেদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত জেএমবি, এবিটি এবং হাটের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের। এরপরই সদর্পে ঘোষণা করেছেন—কোনও জঙ্গিমূলক কাজকর্ম বরদাস্ত করবে না তাঁর সরকার। এই আবর্তে হাসিনা আমলে সেনা-পুলিস কর্তাদের ‘নির্যাতন’ কী পর্যায়ে ছিল, তা জানতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ইউনুস। সেখানে তাঁকে হাসিনার আমলে ‘নির্যাতন’ এবং ‘মানবাধিকার ছিনিয়ে’ নেওয়ার বিস্তর ‘গল্প’ শুনিয়েছে গুলাম সারওয়ার রাহাত। কার্যত রাহাতকে ‘বগলদাবা’ করে গোটা আয়নাঘর ঘুরে বেড়িয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। কে রাহাত? কাকে নিয়ে ঘুরছেন ইউনুস? ছবি সহ ইতিমধ্যেই তা এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। বিষয়টি নিয়ে দু’পারেই তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে।
কে এই রাহাত? নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল-মুজাহিদিন-বাংলাদেশের (জেএমবি) সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এই ব্যক্তি এপারের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল চক্রী। কাপড়ের এই ব্যবসায়ীর আর্থিক সাহায্যেই এপারের পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড়, শিমুলিয়া এবং মুর্শিদাবাদের মুকিমনগরে মডিউল খুলেছিল জেএমবি। দু’পারের গোয়েন্দা নথিতেই রয়েছে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালায় জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে পুলিস খুন করে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মাস্টার মাইন্ডও রাহাত। গোটা অপারেশনটা সারতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা খরচ করেছিল সে।
প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল সালাউদ্দিন সালেহান, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান এবং রাকিবুল হাসানকে। তারা প্রত্যেকেই এপার-ওপারের গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ। পরে র্যাবের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে হাসান মারা গেলেও, সালেহান ও বোমা মিজান যোগ দিয়েছিল এপারে জেএমবির মডিউলে। বোমা মিজানকে দক্ষিণ ভারত থেকে পরে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় এনআইএ। কিন্তু ছদ্মবেশ ধরতে পারদর্শী সালেহান এখনও অধরা। সালেহান-বোমা মিজানের এপারে ঢোকা থেকেই শুরু হয়েছিল এরাজ্যে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ‘উত্থানপর্ব’। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়মনসিংহের অপারেশনে রাহাতের নির্দেশেই অংশ নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের মাসুম মিয়াঁ। খাগড়াগড় পর্বে তাকে এনআইএ তথা এপারের গোয়েন্দারা চিনেছিলেন শেখ সাজিদ নামে। এনআইএ ঘোষিত ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারের জঙ্গি সাজিদ ওরফে মাসুম মিয়াঁকে কলকাতা বিমানবন্দরের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। নিরীহ নির্যাতিত নাগরিক সেজে যে রাহাত ইউনুস মিয়াঁর কাছে হাসিনার আমলের ‘অত্যাচার’ ও ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনে’র বিস্তর গল্প শুনিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে মোট সাতজনকে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগও রয়েছে। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার গোপীবাগ রামকৃষ্ণ মিশন রোডে একটি আবাসনে এক ‘হুজুর’, তাঁর ছেলে এবং চার অনুগামীকে কুপিয়ে খুন করা হয়। তার আগে চট্টগ্রামে গলা কেটে খুন করা হয় এক ‘ব্লগার’কে। সবক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছিল গুলাম সারওয়ার রাহাতের। মোট ৪৩ মাস জেল খেটেছিল এই জঙ্গি। হাসিনার আমলে লাগাতার সাতদিন তার উপর অকথ্য অত্যাচার চলেছিল, জেএমবি’র সেকেন্ড ইন কমান্ডের কাছ থেকে এ বিবরণ শুনে মহম্মদ ইউনুসের প্রতিক্রিয়া—আপনার মতো এরকম হাজার হাজার মানুষ অত্যাচারিত! সব দেখা হবে!