সাত মাসের শিশু-ধর্ষণে ফাঁসির সাজা, বড়তলা কাণ্ডে মামলা শুরুর ৪২ দিনেই রায় আদালতের
বর্তমান | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উত্তর কলকাতার বড়তলায় ফুটপাতবাসী সাত মাসের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ। মাঝে ৮১ দিন। ২৬ দিনে চার্জশিট। আর মামলা শুরুর ৪২ দিনে সাজা ঘোষণা। নারকীয় এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত যুবক রাজীব ঘোষ ওরফে গোবরাকে ফাঁসির সাজা দিল আদালত। মঙ্গলবার কলকাতার বিচারভবনের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র ওই আদেশ দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি বিচারক অন্য একাধিক ধারায় অপরাধী যুবককে পৃথক সাজা ও ৬৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন। তবে আদালতের মন্তব্য, সব সাজাই একসঙ্গে চলবে। অন্যদিকে, নির্যাতিতাকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য কলকাতা লিগাল এইডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বিচারভবনের বন্ধ এজলাসে ওই যুবক বলে, ‘ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে যেন কম সাজা দেওয়া হয়।’ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই অপরাধী যে কাজ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই কোনও অবস্থাতেই বিষয়টি লঘু করে দেখা উচিত নয়। সবদিক থেকেই সরকার পক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করেছে। তাই আমরা অপরাধী যুবকের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাচ্ছি।’ দীর্ঘ সময় ধরে চলে নানা আইনি চুলচেরা বিশ্লেষণ। এরপর সন্ধ্যায় বিচারক দোষী সাব্যস্ত ওই যুবককে বলেন, ‘ঘটনাটি বিরলের মধ্যে বিরলতম, যা ভাবলে আমাদের শিহরিত হতে হয়। ঘটনার নৃশংসতা ও ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই আপনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। পাশাপাশি ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যে সমস্ত ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেই অভিযোগও সবদিক থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সেই অপরাধে আপনাকে সাজা দেওয়া হল।’ বিচারভবনের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি দীপঙ্কর কুণ্ডু বলেন, ‘ফুটপাতবাসী ওই শিশু ও তার পরিবার যে ন্যায়বিচার পেল, সেটাই স্বস্তির। আমরা শিশুটির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
দুধের শিশুটি এখনও একটি সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। নির্যাতনের জেরে তার যৌনাঙ্গ এবং বৃহদন্ত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। এদিন এক পুলিস কর্তা জানান, যাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ না থাকে, তাই এই ঘটনায় যাবতীয় ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ রাইট ব্লকার যন্ত্রের মাধ্যমে দেখানো হয় আদালতকে। ডিএনএ পরীক্ষায় যুবকের বীর্য ও রক্তের প্রমাণ মিলেছে। এদিন বড়তলা এলাকার বহু মানুষ আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন। অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় তাঁরা খুশি। মামলার বিচার চলাকালে অপরাধী যুবকের মা কয়েকদিন এলেও এদিন অবশ্য কেউই আসেননি। অন্যদিকে, নির্যাতিতার বাবা অসুস্থ হয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। মা রয়েছেন সন্তানের সঙ্গে। হাসপাতালেই। তাই আসতে পারেননি। তবে এদিন চোখেমুখে বিজয়ীর গর্ব ছিল মানসী মাইতি রায়ের। তিনি এই মামলার তদন্তকারী অফিসার। ঘটনার দিন ৩০ নভেম্বর থেকে থেকে রায় ঘোষণা, অর্থাৎ ৮১ দিনের এই আইনি যুদ্ধে কঠিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন যে তিনিও।