রামকৃষ্ণদেবের জন্মদিনে বিবেক দুয়ারের উদ্বোধন হল হাওড়ায়
বর্তমান | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ১৮৯৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে হাওড়ার শিবপুরের নবগোপাল ঘোষের বাড়িতে পা রেখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এই বাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বার্লিন থেকে আনা পোর্সেলিনে তৈরি রামকৃষ্ণদেবের একটি পট। রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে পায়ে হেঁটে সন্ন্যাসীদের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে এসেছিলেন ঘোষবাড়ি পর্যন্ত। তারপর বাড়ির গৃহিণী নিস্তারিণী দেবীকে উপহার দিয়েছিলেন নিজের মাথার পাগড়ি। সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে রামকৃষ্ণপুর লঞ্চঘাট ও ফোরশোর রোডের সংযোগকারী রাস্তায় তৈরি হয়েছে ২৫ ফুট উচ্চতার একটি তোরণ। নাম রাখা হয়েছে ‘বিবেক দুয়ার’। মঙ্গলবার রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই তোরণের উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সভাপতি স্বামী গৌতমানন্দজি মহারাজ। বিবেক দুয়ারের জন্য শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে বিবেক দুয়ারের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সভাপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী ভজনানন্দ ও স্বামী গিরিশানন্দ, সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ সহ বেলুড় মঠের অন্যান্য মহারাজরা। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার সমস্ত জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়েছিল বিবেক দুয়ার নির্মাণের কাজ। বিভিন্ন ট্রাস্টের অনুদান মিলিয়ে বিবেক দুয়ার তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা। শুভেচ্ছা বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মঠ ও মিশনের সমস্ত সন্ন্যাসী মহারাজদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত সংগঠন হিসেবে কাজ করার জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের কোনও স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরুভাই-শিষ্যরা বরানগর মঠ এবং বলরাম বসুর বাড়িকে কর্মস্থল হিসেবে ব্যবহার করতেন। তৃতীয় ঠিকানা ছিল শিবপুরের নবগোপাল ঘোষের বাড়ি। ব্রিটিশ কোম্পানিতে উচ্চপদে কর্মরত নবগোপালবাবু ছিলেন রামকৃষ্ণদেবের পরম ভক্ত। সেই বছর নবগোপালবাবু বাড়িতেই রামকৃষ্ণদেবের মন্দির প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ঠাকুরের প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি দেখে মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনে শিবপুরের ঘোষবাড়িতে পা রাখেন স্বামীজি। মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে ১৫ জন গুরুভাইকে সঙ্গে নিয়ে বরানগরের আলমবাজার মঠের ঘাট থেকে তিনটি ডিঙি নৌকো করে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটে আসেন তিনি। গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা গান ‘কে রে ওরে দিগম্বর’ গাইতে গাইতে পায়ে হেঁটে নবগোপালবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হন স্বামীজি।-নিজস্ব চিত্র